‘আমাদের নিরাপদ যানবাহন দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হোক’

করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে গণপরিবহন চলাচলে। 

কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ করে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নেয় মালিকরা। এ কারণেই গতকাল শনিবার (৪ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকায় এসেছেন।

এ অবস্থায় তীব্র সমালোচনা মুখে পড়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ফের কারখানা বন্ধ রাখান আহ্বান জানায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজে যোগ দেয়ার জন্য কারখানার দিকে ছুটছেন শ্রমিকরা। কারখানার সামনে আসার পর জানতে পারেন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। প্রতিটি গার্মেন্টস কারখানার গেটে মাইকিং করে এ কথা শ্রমিকদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার কোথাও আবার টানানো হয়েছে নোটিশ। এ অবস্থায় কাজে যোগ দিতে না পেরে কিছু সময় অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে যান শ্রমিকরা। 

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার গার্মেন্টসের এক শ্রমিক বলেন, ২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর আমরা বাড়িতে চলে যাই। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ফোন দিয়ে জানানো হয় কারখানা খোলা। কাজে যোগ না দিলে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই জীবন ঝুঁকি নিয়ে আবার ঢাকায় চলে এসেছি। আমার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। রাস্তায় কোনো বাস বা যানবাহনও নেই। দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে পরে একটি ট্রাকে কয়েকজন মিলে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এসেছি। সেখান থেকে হেঁটে মিরপুর এসেছি। সকালে কারখানায় গিয়ে দেখি বন্ধ। তাহলে কেন আমাদেরকে এতো কষ্ট দেয়া হলো। আমরা এখন কোথায় থেকে খাবো? আবার বাড়িতেও তো ফিরে যেতে পারবো না।

সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানা মালিকদের পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও মাইকিং করে বন্ধের ঘোষণা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকরদের ১২ তারিখে এসে বেতন নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। 

আরেক শ্রমিক বলেন, শনিবার কারখানার সুপারভাইজারের ফোন পেয়ে হেঁটে নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসেছি। এখন শুনি কারখানা বন্ধ। তাহলে কেন আমাদেরকে এই ভোগান্তি দেয়া হয়েছে? আমরা এখন কোথায় যাবো? যদি কারখানা বন্ধ রাখা হয় তাহলে আমাদেরকে নিরাপদ যানবাহন দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হোক। এভাবে ডেকে এসে ফিরিয়ে দেয়ার তো কোনো মানে হয় না।

এদিকে হাজার হাজার শ্রমিকের পদচারণার কারণে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে দেখা যায় সাভার ও আশুলিয়ার নগর জীবনে। ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দেখা গেছে অসংখ্য যানবাহন।

এসব যানবাহনে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা কারখানা অভিমুখে রওনা হওয়ায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ঘরে থাকা মানুষদের মাঝে। কেউবা গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের পথ ধরেছেন। সেখানেও দেখা গেছে গিজগিজে মানুষের ভিড়।

শিল্প-পুলিশের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিল্প মালিকরা কারখানা খোলা রেখেছেন। হাজার হাজার শ্রমিক কারখানার উদ্দেশে পথে নেমেছেন। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, কাজটা খুবই অমানবিক হয়েছে। শ্রমিকদেরকে ঘরে ফেরাতে হলে আমাদেরকে এখন অনেক কঠোর হতে হবে। তখন সবাই বলবে আমারা শ্রমিকরদের সাথে দুর্ব্যবহার করি।

এদিকে সমগ্র বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাগরিকদের অনেককে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //