‘জাতিরাষ্ট্রে বহুজাতিসত্তার স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি’ শীর্ষক বৈঠকি অনুষ্ঠিত

সাম্প্রতিক দেশকালের আয়োজনে ‘জাতিরাষ্ট্রে বহুজাতিসত্তার স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি’ শীর্ষক বৈঠকি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ২৫ জানুয়ারি (শনিবার) বিকেল ৪টায় সাম্প্রতিক দেশকাল কার্যালয়ে (১০/২২, ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর) এ বৈঠকি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকিতে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রশান্ত ত্রিপুরা।

আলোচনায় প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, রাষ্ট্রের ধারণা মূলত উদ্ভব হয়েছে মানব সভ্যতার বিকাশ লগ্ন থেকে। আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা সমকালীন। জাতিরাষ্ট্রের ধারণাটি তারও পরের। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা বহু জাতির অস্তিত্বকে ধারণ করতে পারেনি। বরং বহুজাতিক অস্তিত্বকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে নানাভাবে। শব্দের মারপ্যাঁচে এই অস্বীকৃতি কে বহু ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কখনো উপজাতি  হিসেবে, কখনো নৃ গোষ্ঠী হিসেবে, কখনো কখনো খুব হাস্যকর ভাবে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে ও তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এইযে প্রয়াস, এটা আমাদের সংবিধানের মধ্যেও রয়েছে, সংবিধানের কোথাও বাঙালি জাতির বাইরে অন্য কোন জাতির অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এমনকি ভাষার প্রশ্নেও মাত্র বাংলা ভাষার উল্লেখ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আরো বহুভাষী জনগোষ্ঠীর রয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ২০১০ সালের শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলা ছাড়াও ছটি ভাষায় বই বের করা হয়েছে। কিন্তু আবার বলা হচ্ছে এসব ভাষা শিক্ষা দেয়ার মতো যথেষ্ট শিক্ষক এর অভাব রয়েছে। আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় ২০১০ সালের শিক্ষা কমিশনের 'মাতৃভাষা' শিক্ষা শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। মাতৃভাষায় নয়। বিষয়টা গোলমেলে। মাতৃভাষা শিক্ষা এবং মাতৃভাষায় শিক্ষা এদষ দুয়ের মধ্যে যথেষ্ট তফা আছে।

আলোচনার প্রশান্ত ত্রিপুরা আরো বলেন, একজন আদিবাসী হিসেবে নয় আমি কথা বলছি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ‌। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বার্থেই বহু জাতির অস্তিত্বকে মর্যাদা পূর্ণভাবে গ্রহণ করা উচিত।

১৯৯১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে প্রশান্ত ত্রিপুরা পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরবর্তিতে ২০০১ সাল থেকে একাধিক সংস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রায় এগারো বছর পরে ২০১২ সাল থেকে তিনি ফ্রিল্যান্স গবেষক-পরামর্শক ও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবির ভূমিকায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি লেখালেখিতে সময় দিচ্ছেন। বর্তমানে একবছর বেশি সময় ধরে তিনি একটি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

প্রশান্ত ত্রিপুরা আট বছর (১৯৮২-১৯৯০) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনার পাট চুকিয়ে দেশে ফেরার পর নতুন করে চারপাশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা জানা ও বোঝার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। এখনো সেটা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। লেখালেখি ও গবেষণার ক্ষেত্রে তার আগ্রহের একটা বড় জায়গা হচ্ছে পরিচয় নির্মাণের রাজনীতি ও ইতিহাস, ভাষা এবং পরিবেশ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //