এখনও কার্যকর হয়নি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি

দুইজন কানাডা-আমেরিকায়, তিনজন অনিশ্চিত

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার প্রায় ১১ বছর পরও পলাতক পাঁচ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। কার্যকর হয়নি ফাঁসিও। খুনিদের ফিরিয়ে আনতে ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’ গঠন করা হলেও তেমন অগ্রগতি নেই। 

পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এএম রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাকি তিনজন কোন দেশে অবস্থান করছেন তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) ধারণা, এ তিনজন পাকিস্তান, লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে অবস্থান করছে। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও খান রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। 

তবে খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি। তারা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ এপ্রিল আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মোট ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকি ছয়জনের মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের ২ জুন মারা যান বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।

১৯৭৫ সালের এই দিনে ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডে অধরা পাঁচ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করছে। গঠন করা হয়েছে ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’। কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরানো বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভাপতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আর রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাকি তিন খুনিকে খোঁজা হচ্ছে। আপাতত এটুকুই অগ্রগতি রয়েছে।

রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম। তিনি বলেন, পলাতক এই পাঁচজনের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ জারি করা আছে। ২০০৯ সালে এই নোটিশ জারির পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছর ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বছরের মার্চ মাসে, এ এম রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে ১৮ জুলাই, শরিফুল হক ডালিমের বিষয়ে ১৯ জানুয়ারি, খন্দকার আবদুর রশিদের বিষয়ে ১৯ মার্চ এবং মোসলেম উদ্দিনের বিষয়ে ১৮ ডিসেম্বর রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।

নূর চৌধুরী কানাডায় থাকলেও ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে দেশটির সরকার, যদিও তাকে ফেরত পেতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এএম রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বারবার। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাশেদ চৌধুরীর ফাইল ওপেন করায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আশাবাদী।

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা এএম রাশেদ চৌধুরীর ফাইল ওপেন করেছে সে দেশের সরকার। ইন্টারপোলে জারি করা তার রেড নোটিশ বাতিল হতে পারে। তখন তাকে সহজে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরীকে সহসাই দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়ে সরকার আশাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পলাতক এই দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতাও রয়েছে। তবে সরকারের নানা উদ্যোগে এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়েছে। সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান কূটনীতিকরা।

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চললেও বিভিন্ন দেশের আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। তবে জাতির জনকের পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরের দাবি দেশবাসীর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //