সাড়া নেই সিনেমার গানে

সিনেমার গল্প আকর্ষণীয় করে তুলতে গানের বিকল্প নেই। গান গল্পে প্রাণ জাগায়। ৬০, ৭০ ও ৮০-এর দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গাননির্ভর হলেও এখন আর তা নেই। আগের মতো এখন আর সিনেমা দেখার পর দর্শক গুনগুনিয়ে গান গায় না। গত কয়েক বছরে বাংলা চলচ্চিত্রে কোনো গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে কি-না, তা বলা কঠিন।

হয়তো দু-একটি গান পাওয়া যাবে, যেগুলো সামান্য সময়ের জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে; কিন্তু হারিয়ে গেছে আবার। অথচ সত্তর, আশি কিংবা নব্বই দশকের চলচ্চিত্রের অনেক গান এখনো জনপ্রিয় হয়ে আছে। সেইসব গান দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে বলেই এখনো ব্যবহার হচ্ছে। এখন সিনেমার গল্পের সঙ্গে গানের কোনো সামঞ্জস্য নেই। হুট করেই গান চলে আসে গল্পের মাঝে। কথা ও সুরে নেই কোনো নতুনত্ব। গীতিকার হয়তো জানেন না, তিনি কি লিখেছেন। অনেক ছবিতে তো সিনেমার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর জন্যই গান ব্যবহার করা হয়। অশ্লীল কথার অভিযোগও পাওয়া যায় এখনকার সিনেমার গানে। এইতো গেল বছরে ‘দহন’ সিনেমার একটি গানের অশ্লীল কথার বিষয়টি তো সবারই জানা। অবশ্য তোপের মুখে পড়ে মুক্তির আগে গানটি সংশোধন করতে বাধ্য হন পরিচালক। 

বর্তমানে কোনো সিনেমা মুক্তির আগে তার দু-একটি গান অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু মুক্তির পরেও সিনেমার সেই গান দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দেয় না। চলতি বছরে তারকাবহুল বেশকিছু ছবি মুক্তি পেলেও কোনো ছবির গানই জনপ্রিয় হয়নি। মুক্তির আগে চলতি মাসের একাধিক ছবি নিয়ে হৈ-চৈ হলেও মুক্তির পর ছবিগুলোর সঙ্গে গানগুলোও ফ্লপ হয়েছে। 

প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার আলম খান বলেন, যুগের সঙ্গে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর সিনেমার গানে মেলোডি পাচ্ছি না। আগে আমরা একটি সিনেমার গানের জন্য গীতিকার-সুরকার ও শিল্পীরা মিলে যে পরিশ্রম করতাম। যে যত্ন  নিয়ে কাজ করতাম এখন তা হয় কি-না আমার জানা  নেই। আগে সিনেমার গল্পের সঙ্গে গানের মিল ছিল। দৃশ্যের সঙ্গে গানের মিল ছিল। গানের আগের সিক্যুয়েন্সের সঙ্গে গানের মিল ছিল। এখন ছবির দৃশ্যের সঙ্গে গানের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। গানের কথা ও সুরের ঘাটতি থাকে। আগে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, বশির আহমেদ, সৈয়দ আব্দুল হাদি, এন্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পীও এখন নেই।

কণ্ঠশিল্পী মনির খান বলেন, চলচ্চিত্র একটি বড় মাধ্যম। বড় পর্দার কাজ গোপনে হয় না। আমার জীবনে দেখা আলাউদ্দিন আলী সিনেমার গানের জন্য দিনের পর দিন পরিশ্রম করতেন। সিনেমার গানের জন্য মানুষের মেলা বসাতেন। সেখানে ওই সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সুরকার, গীতিকার, মিউজিশিয়ান সবাই একত্র হতেন। একটি গান নিয়ে বিশ্লেষণ হতো। সিনেমার স্ক্রিপ্ট, গানের স্ক্রিপ্ট ও সুর নিয়ে আলোচনা হতো। সবার পরিশ্রমে সুন্দর একটি গান তৈরি হতো। এ জন্য সময় লাগত। এরপর সেই গান চলচ্চিত্রে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন একটি সিনেমার গান খুব অল্প সময়ে তৈরি হচ্ছে। ঘরে বসে নিজের মতো করেই গান তৈরি হচ্ছে। সেসব গান শ্রোতাদের ভালো লাগছে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //