ছবির গল্প-চলচ্চিত্রের কথা

স্থিরচিত্র থেকে চলচ্চিত্র শুরু হলো, তখন আমরা দেখতে শুরু করলাম বাস্তবচিত্র। সচলতা অনুভূতিতে নাড়া দিতে লাগল। চলচ্চিত্র শিল্পের মাধ্যমে তখন সাদা-কালোর যুগ চলছে; কিন্তু যখন চলচ্চিত্রের জগতে আমরা বাস্তব অর্থাৎ প্রাকৃতিক রঙ দেখবার সুযোগ পেলাম তখন তা হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় সংযোজন। পৃথিবীতে ‘প্রাকৃতিক রঙ’ যুক্ত করা হলো চলচ্চিত্রে, যা মিশে গেল জীবনে। শব্দ যুক্ত করার পর খুব দ্রুত নির্বাক চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের বাদ্য-বাজনা বিলীন হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু সাদা-কালোর বদলে চলচ্চিত্রে রঙের ব্যবহার করার প্রচলন অনেক ধীরে হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল রঙিন চলচ্চিত্রের খরচ কুলিয়ে ওঠা এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা তৈরি করা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় রঙিন চলচ্চিত্রই প্রাধান্য বিস্তার করে নিয়েছে এমন সময়ের কথা বলছি। সেকালের প্রযোজকরা বুঝতে পারছিলেন, রঙিনের দিকে দর্শকদের ঝোঁক বেশি। দর্শকের মনে আঁকা হয়ে যায় রঙিন ছবি এবং ছবির গল্প। আরও একটি কারণ ছিল, টেলিভিশন ১৯৬০-এর দশকের আগে রঙিন হয়নি। তখনকার দিনে রঙিন একটা প্লাস্টিক লাগিয়ে দেয়া হতো, যারা রঙিন টেলিভিশন কিনতে না পারত। তাই টিভির সাদা-কালোকে হারানোর জন্য চলচ্চিত্রে রঙের সংযোজন আবশ্যক ছিল। ১৯৬০-এর দশকের পরে রঙিন চলচ্চিত্রই নির্মাতাদের মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠে। ইউরোপের চলচ্চিত্রে তখন কেবল রঙিন ছবি বানানোর ঢল বললেই চলে।

১৯৬০-এর দশকে স্টুডিও পদ্ধতির পতনের পর কয়েক দশকজুড়ে চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে চলচ্চিত্র শিক্ষা গুরুত্ব অর্জন করে। নব হলিউড, ফরাসি নবকল্লোল এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি দ্রুততর হয়ে ওঠে। তাছাড়া গত শতকের ৯০-এর দশকের পর ডিজিটাল প্রযুক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে দুনিয়াজুড়ে। দুনিয়াজুড়ে বিভিন্নভাবে শিল্প আন্দোলন হয়েছে। চলচ্চিত্রের জগতেও তেমনি একটি আন্দোলন ছিল- ফরাসি নবকল্লোল চলচ্চিত্র আন্দোলন। 

গত শতকের ৫০ ও ৬০-এর দশকের কিছু ফরাসি চিত্রপরিচালকের একটি দলের জন্য দেয়া এই নাম ছিল সমালোচকদের। তখনকার দিনে যদিও এটি কোনো সংগঠিত আন্দোলন ছিল না, নবকল্লোলের পরিচালকরা সবাই সচেতনভাবে ধ্রুপদী সিনেমাটিক রূপায়ন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সম্পাদনা, উপস্থাপনের ধরন এবং ধারাবর্ণনার পদ্ধতি, সবকিছুতেই তারা প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার প্রয়াস পান এই সময়ে। ফরাসি নবকল্লোল পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন- জঁ-লুক গদার, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, এরিক রোমার, ক্লোদ শাব্রল এবং জাক রিভেত। এঁরা সবাই বিখ্যাত চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ‘কাইয়ে দু সিনেমা’তে লিখতেন। অন্যদিকে চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক অঁদ্রে বাজাঁ ফরাসি নবকল্লোলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেন।

যার ফল আজকের নতুন ধারার নতুন নতুন চলচ্চিত্র। এ সময়ের তরুণ সাহসী নির্মাতারা নবকল্লোলদের অনুসারী বলেই মনে হয়। কেননা- চলচ্চিত্রে নিরীক্ষা সত্যি খুব সাহসী উদ্যোগ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //