কুসিকে নিরাপত্তাসামগ্রী না দেয়ার অভিযোগ ওয়ার্ড সচিবদের

করোনায় নিরলস সেবা দিচ্ছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তবে যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম না দেয়ার অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ড সচিবরা। মেয়র বলছে ২৪ লক্ষ টাকার নিরাপত্তা সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

সম্প্রতি কুসিকের একজন ওয়ার্ড সচিব করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন কুসিকের কাউন্সিলর, ওয়ার্ড সচিব ও কর্মীরা। কর্মচারিরা বলছেন তাদের জন্য কোন নিরাপত্তা সামগ্রী ও ঝুঁকি ভাতার ঘোষণা দেয়া হয়নি। নগরীতে ওয়ার্ড সচিবসহ মোট ১৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। ফলে কর্মচারিদের মাঝে দিনদিন উদ্বিগ্নতা বাড়াই চলছে।

সূত্র জানায়, প্রবাস ফেরতদের তালিকা, প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, নতুন ভাড়াটিয়াদের তালিকা ও তাদের পূর্ব অবস্থান জানা, অন্য জেলা থেকে আগতদের তথ্য সংগ্রহ, সরকারি সকল ভাতা ভোগীদের তলিকা, ভাতা বিতরণ, ত্রাণ সহায়তায় তালিকা তৈরি, প্রাথমিক যাচাই-বাচাই, খাদ্য সংগ্রহ, ত্রাণের তালিকা তৈরি, নির্বাচিত তালিকা দপ্তরে প্রেরণ, সেবা ভোগীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ, সে তালিকা কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কাউন্সিলর, সচিব, অফিস সহায়ক, দফাদার ও মাঠকর্মীরা।

২১ নং ওয়ার্ড সচিব আবদুল্লাহ আল কাউছার মন্তব্য করেন, দুর্যোগের এ সময়ে সপ্তাহে সাত দিন অফিস করতে হয়। এমনও দিন যায়, সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯/১০/১১ টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ইফতার অফিসে করি। বর্তমান সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়েছে। মাষ্টার রোলে কাজ করে, আমাদের নেই অতিরিক্ত সম্মানী। নেই প্রণোদনা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি। আমাদের সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেয়া হয়নি। একজন সচিব আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি। যদি কোন কর্মচারি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার পরিবারের দায়িত্বকে নেবে? সে পরিবারের কী হবে?

কুসিক ওয়ার্ড সচিব সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক পাটোয়ারী বলেন, সমাজসেবা, মহিলা অধিদপ্তর, ডিসি অফিস, সিটি কর্পোরেশন। ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সকল আদেশ আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়। দৈনিক ৩শ টাকার হাজিরা দিয়ে, আমাদের দিন ব্যাপী কাজ করানো হচ্ছে। আমাদের কোন ঝুঁকি ভাতা নেই, আমাদের কোন বীমা নেই। একটা স্বাস্থ্য বিমা সরকার করে দিতে পারে। মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড সেনিটাইজার সিটি কর্পোরেশন থেকে দিয়েছে। এ জিনিসগুলো সাধারণ মানুষদের মাঝে বিতরণের জন্য । আমরা নিরাপত্তার জন্য কিছুই পাইনি।

কুসিক ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জমীর উদ্দিন খান জম্পি বলেন, আমাদের সরকারি সকল আদেশ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হয় । যখন যে ডাটা পাঠানের জন্য বলা হয়, আমরা তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে সে তথ্য সংগ্রহ করে, তা পাঠাই। ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না, দিন রাত কাজ করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা, সচিব বা কর্মীরা ব্যবহারের জন্য কিছুই দেয়া হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে, নিজের টাকায় কর্মীদের পিপিই ক্রয় করে দিয়েছি। সিটি কর্পোরেশন থেকে কর্মচারিদের জন্য কোন নিরাপত্তা সামগ্রী দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ওয়ার্ড সচিব আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের প্রায় ১৫ টন করে চাল দিয়েছি। মহিলা কাউন্সিলরদের ১০-১২ টন করে, চাল দিয়েছি। তাদের তেল, আলু, পেয়াজ, ডালসহ নিত্যপণ্য দিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে হাজার মাস্ক, হ্যান্ড গলাভস, হ্যান্ড সেনিটাইজার, সাবান দেয়া হয়েছে। কোন কাউন্সিলরকে কী দিয়েছি, সব তালিকা করা আছে। এ বাবদ ২৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এটার ভাউচার আমার কাছে আছে। তবে তাদের এখনও পিপিই দিতে পারিনি। পিপিইটার দাম বেশি। গাড়ির চালকদের পিপিই দিয়েছি। প্রতি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে কর্মী আছে। কাউন্সিলর যদি চায় তার কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কিছু নিরাপত্তা সামগ্রী দিতে পারে। এগুলোর জন্য আমাদের দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। একটা ভালো মাস্ক মাত্র ৩০ টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //