বরিশালে উদযাপিত হচ্ছে ব্যতিক্রমী ঈদ

টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পরে বরিশালে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে নেই উৎসব মুখর পরিবেশ। এমনকি প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ঈদগাহসহ বড় কোন ঈদের জামাত ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদ-উল-ফিতরের জামাত।

প্রতিটি মহল্লার মসজিদগুলোতে সোমবার (২৫ মে) সকাল ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদ জামাত। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শহরের বেশিরভাগ মসজিদে হয়েছে একাধিক ঈদ জামাত। আর প্রতিটি মসজিদেই ঈদের নামাজ শেষে প্রাণঘাতী করোনা থেকে বিশ্ববাসির মুক্তি চেয়ে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত হয়েছে। তবে মুখে মুখে শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও হয়নি করমর্দন বা কোলাকুলি।

এদিকে করোনার কারণে মানুষের মধ্যে ঈদ আনন্দ না থাকায় সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে চলছে সুনশান নিরবতা। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং অকারণে ঘোরা ফেরা বন্ধ করতে রাস্তায় নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা। সব মিলিয়ে এক ব্যতিক্রম এবং অচেনা ঈদ উদযাপন করছেন বরিশালবাসী।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বরিশালে কর্মরত সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

সকাল ৮টায় বরিশাল নগরীর কালেক্টরেট মসজিদে অনুষ্ঠিত জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানসহ জেলা এবং বিভাগীয় প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঈদের নামাজ আদায় পূর্বক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা মহামারী মানুষের জীবনের জীবন-জীবিকার উপর আঘাত হেনেছে। বিশ্বে অনেক লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই ভাইরাস।

অথচ এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে এখনো কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন এই রোগ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আবার এই মহামারি থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে আল্লাহর ইবাদত এবং সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


এ সময় তিনি মানুষকে সতর্ক করে বলেন, আপনারা অকারণে অহেতুকভাবে বাইরে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। মনে রাখবেন আপনি আক্রান্ত হলে আপনার পরিবারও সেই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আর এই দায়ভার জীবনভর আপনাকেই বহন করতে হবে।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এই মহামারির কারণে আজ আমাদের এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। আমরা সকলে এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারিনি। এই ঈদ আমরা এভাবে কাটালে আগামী ঈদগুলোতে যেন এমন না হয় সেই দো’আ করতে হবে। আর এজন্য আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলমান করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে করোনা মহামারির কারণে বরিশাল নগরীর পুলিশ লাইন্সে এই প্রথম ঈদ-উল-ফিতরের চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানকার ঈদের জামাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম-বিপিএম (বার) পিপিএম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

তাছাড়া নগরীর চকবাজার জামে এবায়েদুল্লাহ মসজিদে ৪টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইতিপূর্বে পুলিশ লাইন্স এবং এবায়েদুল্লাহ মসজিদে দুটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদ নামাজ আদায় করায় ৪টি করে ঈদের জামাতের আয়োজন করতে হয়েছে।

এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভাগের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই পীরের দরবারে। এছাড়া উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ, ঝালকাঠির কায়েদ সাহেব হুজুরের দরবার, মির্জাগঞ্জ দরবার, ছারছিনা পীরের দরবারসহ বিভাগের প্রতিটি বড় মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

তার আগে সকাল থেকেই ঈদের জামাত আদায়ের লক্ষ্যে আসা মুসল্লিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে আসেন। তারা মসজিদে প্রবেশের পূর্বে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণু মুক্ত করা, জায়নামাজ এবং মাস্ক পড়ে মসজিদে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //