পর্যটক শূন্য পার্বত্যাঞ্চল, দিশেহারা ব্যবসায়ীরা

বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতকে গ্রাস করেছে করোনাভাইরাস। ৮ই মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। করোনায় বিপর্যস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাত। গত দুই দশকে গড়ে উঠা পাহাড়ের পর্যটন সবচে কঠিন সময় মোকাবেলা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলো পাহাড়ের পর্যটনে দারুণ চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছিল।  প্রতি বছর ঈদে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে ভিড় থাকলেও এবারে চিত্র ভিন্ন। করোনকালে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সুনসান নিরবতা। পর্যটকশূন্য হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই খাতের আর্থিক ক্ষতি।

ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। আগের বছরগুলোতে ঈদের মৌসুমে ভরপুর বাণিজ্য হলেও এবার তা শূন্য। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারানোর দশায়। লাখ লাখ বিনিয়োগের পর আয় শূন্য হোটেল রির্সোট ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। করোনার পর কয়েক মাস কেটে গেলেও ভবিষ্যত নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এই অবস্থা চলমান থাকলে বিপাকে পড়বে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যত নিয়ে বেশি চিন্তিত পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থা চলমান থাকলে ভবিষ্যত বিপন্ন হবে। এমনটায় বলছে এ খাতের ব্যবসায়ীরা। পাহাড়ের পর্যটনের বড় বিনিয়োগ হোটেল ও রির্সোট নির্মাণে। এরপর রয়েছে পরিবহন ও রেস্টুরেন্ট খাত। পর্যটক না থাকায় অতিথি শূন্য হোটেল রির্সোটগুলো।

রাঙামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে মানসম্পন্ন রির্সোট ও কটেজের সংখ্যা ১০৬টি। এসব রির্সোট ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছে ২০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আবার অনেকে মাসিক চুক্তিতে  রিসোর্ট ইজারা নিয়েছে। মাসিক ভাড়া পরিশোধ নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আবার  অনেকে পরিশোধ করেছে পুরো বছরের অর্থ। অর্থ পরিশোধ করলেও আয় নেই তাদের। এই অবস্থা চলমান থাকলে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির আশংকা করছে এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

সাজেকে কয়েকটি রির্সোট ইজারা নিয়ে বিনিয়োগ করেছে পর্যটন উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, পর্যটনে কখনো এমন দিন আসেনি। টানা ২ মাসের বেশি সময় ধরে সবকিছু বন্ধ। তবে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।  এই অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চলমান থাকলে  অনেক ব্যবসায়ী ঠিকতে পারবে না।  ইজারা নেয়া অনেক বিনিয়োগকারী রির্সোট মালিককে পুরো বছর অর্থ পরিশোধ করেছে। আবার অনেকে মাসিক চুক্তি নিলেও ৫-৭ মাসের অর্থ পরিশোধ করেছে। বিনিয়োগ করার পর এখন কোন ব্যবসা নেই। এছাড়া বাঁশ কাঠে তৈরি অনেক রির্সোট পুনরায় সংস্কার সময় চলে আসছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পর্যটনের ক্ষতি আরো বড় হবে।

পর্যটন উদ্যোক্তা জিয়াউল হক জানান, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকেই পর্যটকশূন্য পাহাড়। ফলে এখাতের ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছে। আয় না থাকলেও রিসোর্টে কর্মচারি মাসিক বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ কোন আয় নেই । মাসিক চুক্তিতে নেয়া রিসোর্টের ভাড়া পরিশোধ বন্ধ  রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া পরিশোধ নিয়ে রির্সোট মালিকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রিসোর্টগুলোর অর্ধেক ভাড়াও পরিশোধ করলেও অনেক বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাজেকের কংলাকে রক প্যারাডাইসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন ওমর বিজু জানান, ঈদের সময়ে পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে যায়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। লকডাউনের কারণে অনেকে অগ্রিম বুকিং বাতিল করেছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে অগ্রিম বুকিং বাবদ নেয়া ৪ লাখ ৮০ হাজার ফেরত দিয়েছি। ঈদে মৌসুমে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। করোনা দুর্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।

অনেকে ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছে পর্যটন নির্ভর পরিবহন খাতে। কিস্তিতে কেনা এসব গাড়ির অর্থ পরিশোধ নিয়ে দুঃশ্চিতায় পরেছে পরিবহন মালিকেরা। পরিবহন চালক  প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়িতে প্রায় ২১০ টি মাহেন্দ্র গাড়ি খাগড়াছড়ি-সাজেকে যাতায়াত করে। বেশিরভাগ গাড়ি ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে। তবে আয় না থাকায় এসব গাড়ির কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না পরিবহন মালিকরা। তবে কিস্তি পরিশোধের জন্য  চাপ দিচ্ছে  পরিবহন কোম্পানিগুলো।

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অরণ্য বিলাস, হোটেল গাইরিংসহ একাধিক হোটেল মালিকরা জানান, করোনার প্রভাবে খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্যালিতে অনেক হোটেল রির্সোট বাতিল হয়ে গেছে। হোটেল বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে।  

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পর্যটন খাতে আস্থা ফেরাতে অনেক দিন সময় লাগবে। খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল এর ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত খাত পর্যটন। হোটেল মোটেল বন্ধ হওয়ায় অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে। এতে  অনেকে বেকার হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও পর্যটন খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে আরো এক বছর সময় লাগবে। মানুষ শতভাগ নিরাপদ থেকে ভ্রমণ করতে বের হয়। তিনি আরো জানান, ঈদ মৌসুমে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল বন্ধ থাকায় মাসিক ক্ষতি অন্তত ১৫ লাখ টাকা। আমাদের অনেক স্টাফ এখন বেকার।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //