সুনামগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোতে উৎসব নেই, আছে নীরবতা

এক সময় সুনামগঞ্জের যে পর্যটন স্পটগুলো লোকে লোকারণ্য থাকত আর থাকত ঈদ উপলক্ষে দল বেঁধে নানান আয়োজন। সেখানে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। নেই ঈদকে কেন্দ্র করে উৎসবের আয়োজন। করোনায় একের পর এক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়িয়েই চলছে। ফলে সবার মনেই এখন বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর, ভারতীয় মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা শহীদ সিরাজ লেক, স্বচ্ছ জলের অধিকারী মায়াবী যাদুকাটা নদী, আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকটিলা, কাব্রবিক প্রান্তর জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় প্রতিদিনেই হাজার হাজার দেশ-বিদেশী পর্যটক, দর্শনার্থী প্রকৃতিপ্রেমী আর আশ পাশের মানুষের আগমনে ভরপুর থাকলেও এবার চারপাশেই নিরাবতা বিরাজ করছে।

ফলে ঐসব স্থানে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলেও তারাও এখন বসে অলস সময় পার করছে নিজ নিজ বাড়িতে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়তে পারে ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে করোনাভাইরাসের শুরুতেই টাংগুয়ার হাওরসহ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের সমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

এরপর থেকেই এমন অবস্থা। আর এই অবস্থায় পর্যটকরাও আসে না।

শিমুল বাগানে আগত পর্যটকদের কাছে পানি বিক্রেতা সরেফ মিয়া জানায়, বাগানের পাশেই মানিগাঁও গ্রামে বাড়ি মানিগাঁও মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। এর ফাঁকেই বাগানে পানি বিক্রি করছে দীর্ঘদিন ধরে আগত পর্যটকদের কাছে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশংকায় পর্যটক আসে না শিমুল বাগানে। ফলে তার বিক্রি নেই। গত ঈদেও প্রচুর পর্যটক এসেছিল আর ঈদের দিন থেকে এক সপ্তাহ মানুষজন প্রচুর ভিড় থাকত আমাদেরও লাভ হত এবার ত কোন কিছুই চোখে পড়ে নি। 

এমনিই কথা এই নাদেরা বেগম, রাহিমা বেগম, রাখাব উদ্দিনের তারাও পানি ও খিরা বিক্রি করে বাগানে। এখন তারা সবাই বাড়িতেই অবস্থান করছে। 

কথা হয় বাগানে আগত পর্যটকদের ছবি তুলে মুগ্ধ করা তরুণ ফটোগ্রাফার মহিবুর রহমান মুহিব এর সাথে। তিনি জানান, শিমুল বাগানে আগত অনেক পর্যটকদের ছবি তুলে কিছু টাকা আয় হত সময়ও ভালো কাটত। এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। বাগান মালিকও বাগানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটক একবারেই নাই। জীবন বাঁচানোই এখন বড় কথা। ঈদ এলেও ঈদের আনন্দ নেই মানুষের মাঝে। আছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। এই বার ঈদে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আগমন নেই। ফলে আমিসহ আমার মত অনেকেই পরিবার নিয়েই ঈদের আনন্দ করেছি।

শিমুল বাগান মালিক রাখাব উদ্দিন জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতেই আমি প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিমুল বাগানে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি। বাগানের গেইট বন্ধ করা হয়েছে। প্রতি বছর ঈদে পর্যটকদের আগমন ঘটলেও এবার ঈদে বন্ধ ছিলো শিমুল বাগান করোনা পরিস্থিতির কারণে।   

শহীদ সিরাজ লেকের পাড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানী শরিফুল জানান, আগে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসত এখানে। ঈদে ত আরো অন্যান্য দিন গুলোর চেয়ে বেশী পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন আসত। এসেই দোকানে থাকা বিস্কুট, কলা, লোফ পানি ও চা খেত এতে সারাদিনে ভালই লাভ হত এখন ত পর্যটক আসে না। আর এসেই কি করবে যার যার জীবন নিয়ে এখন সবাই ব্যস্ত। কি করোনা রোগ আসছে। কাজ কর্ম নাই এখন বাড়িতেই আছি বেকার হয়ে। 
 


মোটরসাইকেল দিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন হান্নান মিয়া। তিনিসহ অনেকেই জানান, করোনাভাইরাসের কারণে আগের মত আর পর্যটক আসেও না। আর আমরাও পর্যটক পরিবহন বন্ধ করেছি প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী। প্রতি ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বে আর পরে সপ্তাহ প্রচুর মানুষজন পরিবহন করতাম এখন একবারেই নাই।  

টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হাদিউজ্জামান সহ অনেকেই জানান, রমজানের ঈদের সময় এমনভাবে পর্যটক শূন্য টাঙ্গুয়ার হাওর আর কখনো তারা দেখেননি। টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচটাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোন হোটেল মোটেল না থাকলেও প্রতিবছর ঈদের সময় টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণকৃত নৌকা সাজ সজ্জা ও আলোক সজ্জায় জলমল করতো। করোনার কারণে সেখানে এখন সন্ধ্যা নামলেই ভূতুরে অবস্থা।

তাহিরপুর থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস পার্দুভাবের শুরুতেই পর্যটকদের থাকা ও অবস্থান নিরুৎসাহিত করতে তাহিরপুর উপজেলা সদর, বাদাঘাট, ট্যাকেরঘাটসহ বিভিন্ন স্থানের আবাসিক হোটেল মালিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যেন কোন পর্যটন এখানে এসে থাকতে না পারে। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পর্যটক পরিবহন যানবাহন জব্দ, চালক মালিকদের সাজার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোসহ অর্থদণ্ড আদায় করা হতে পারে আর পর্যটকরাও নিজেদের জীবন রক্ষায় তাহিরপুর মুখি হয় নি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতেই উপজেলায় পর্যটকদের আগমন ও পর্যটক পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবদ এখনো রয়েছে। আর ঈদের পর্যটক আসছে না। পরিস্থিতি উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //