লকডাউনে পাহাড়ে রঙ ছড়িয়েছে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, জারুল

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে লকডাউন। আর এই লকডাউনের কারণে বদলে গেছে পাহাড়ে প্রকৃতি। 

গ্রীষ্মে খরতাপে পাহাড়ের ভাজে ভাজে শোভা যাচ্ছে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কাঠগোলাপসহ বিভিন্ন বাহারী ফুল। সড়কে যান চলাচল কম থাকায় কমেছে দূষণ। মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় প্রকৃতিতে ফিরেছে সজীবতা। বনের পাখির দেখা মিলছে লোকালয়ে। 

বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে মানুষের বিষন্নতা কিছুটা দূর করছে পাহাড়ের নির্সগ। লকডাউন শেষেও প্রকৃতির স্বকীয়তা টিকিয়ে রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা। 

সাধারণ ছুটির কারণে পর্যটক শূন্য খাগড়াছড়ি। সারাবিশ্বের মতো ধস নেমেছে পাহাড়ের পর্যটন শিল্পে। আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্কে সবসময় থাকত পর্যটকদের আনাঘোনা। বর্তমানে সেখানে সুনশান নিরবতা। নেই কোনো যানবাহনের বিকট শব্দ। যেখানে সারাক্ষণ থাকত মানুষের পদচারণা সেখানের আজ একরাশ নিরাশ নিরবতা গ্রাস করেছে।  

আর প্রকৃতির কোলাহল ও চাপমুক্ত থাকার ‘আকুতি’ যেন বহুকালের আগে। করোনার কারণে মানুষের কোলাহলমুক্ত প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। নরম দুর্বা ঘাস উঠেছে তপ্ত মৃত্তিকায়। যেখানে ভোরে নামে ভেজা শিশির। 

অঘোষিত লকডাউনের কারণে পরিবর্তন এসেছে পাহাড়ে প্রকৃতিতে। গ্রীষ্মের ফুটেছে সোনালু , কৃষ্ণচূড়া, জারুলসহ বিভিন্ন বাহারী ফুল। ফুলের রঙে শোভিত পুরো পাহাড়। পাহাড়ি সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে  লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুল, হলুদ সোনালু। পাহাড়ের এমন প্রকৃতিতে মুগ্ধ হবে যেকোনো পথিক! লকডাউনের কারণে প্রকৃতির সজীবতা অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। সড়কে যান চলাচল কম থাকায় কমেছে দূষণ। রাস্তার দুপাশে সবুজ নিসর্গ। মানুষের চলাচল কম থাকায় প্রকৃতিতে ফিরেছে স্বকীয়তা। প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য আর্শীবাদ হয়েছে লকডাউন।  

খাগড়াছড়ির অর্কিড প্রেমী সাইথোয়াই মারমা জানান, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কের বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটেজে। নানা রঙের ফুল শোভা পাচ্ছে পাহাড়ে। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এই বছর প্রকৃতি আরো বেশি সজীব। লকডাউনের কারণে প্রকৃতিতে ফিরেছে স্বকীয়তা। প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের জন্য আর্শীবাদ। আমাদের উচিত প্রকৃতির প্রতি আমাদের শোষণ বন্ধ করা।

লকডাউনের কারণে পাখিদের জীবন বৈচিত্র্য বদলে গেছে। মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় লোকালয়ে ফিরছে অনেক পাখি। বসন্তবৌরী, সবুজ ঘুঘু, খঞ্জন, নীলগলা বসন্তসহ যেসব পাখি লোকালয় থেকে দূরে বসবাসে অভ্যস্ত তারাও ফিরেছে গ্রামীণ জনপদে। বাসা বাঁধছে অনেক পাখি। 

পাখি প্রেমীরা বলছেন, লোকালয়ের এত কাছাকাছি এত পাখি দেখা যেত না। লকডাউনের পরিবর্তিত প্রকৃতি অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে।

প্রকৌশলী সবুজ চাকমা যিনি পাখির ছবি তুলতে ঘুরে বেড়ান পাহাড়ে পাহাড়ে। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে প্রকৃতি অনেকটায় বদলে গেছে। বসন্তবৌরী পাখি সাধারণত লোকালয় থেকে দূরে থাকত। তারা এখন গ্রামে বাসা বাঁধছে। এছাড়া প্রকৃতি অপরূপ রূপ ধারণ করছে।

লকডাউনের কারণে ইটভাটায় কাঠ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। রক্ষা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তবে লকডাইন শেষেও প্রকৃতি ও নিসর্গ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

খাগড়াছড়ির পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, লকডাউনের কারণে প্রকৃতি প্রাণ খুলে হাসছে। এবছর প্রকৃতি অনেক বেশি সজীব। লকডাউনের কড়াকড়ির কারণে বন্ধ হয়েছে দূষণ। সারাবিশ্বে প্রকৃতি যেভাবে নিজস্ব ছন্দে ফিরেছেন পাহাড়েও তার ব্যতিক্রমী হয়নি। 

তবে লকডাউন শেষেও প্রকৃতি রক্ষায় মানুষ আরো সচেতন হবে এমনটায় প্রত্যাশা পরিবেশ প্রেমীদের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : খাগড়াছড়ি

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //