লালমনিরহাট রেলওয়েতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক ছাটাই

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের অধীনে কর্মরত ৫৮জন শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে বকেয়া ভাতা পরিশোধ না করেই শ্রমিক ছাটাই করায় অর্থ কষ্টে পড়েছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের অধীনে রেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। যা স্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক নবায়নের মাধ্যমে চলমান থাকবে। লালমনিরহাট বেলওয়ে বিভাগে এমন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন ১০৮ জন। যারা দৈনিক ৪শত টাকা মজুরি  হিসেবে উন্নয়ন খাত থেকে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পান। 

প্রতি বছর নবায়নযোগ্য এসব শ্রমিক ৩ বছর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলে তাদেরকে রাজস্ব খাতে স্থান্তারিত করা যাবে মর্মে ২০০৩ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগেও নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার স্মারক নং মপবি/কঃবিঃশাঃ/কপগ-১১/২০০১-১১১। 

এরপর ২০১৭ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব শ্রমিককে একই পদে রাজস্ব খাতে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করেন। যার প্রেক্ষিতে একই সালের ৩ ডিসেম্বর এসব শ্রমিককে রাজস্ব খাতে আত্মীকরণের ব্যবস্থা করতে রেলওয়ের সকল বিভাগীয় কার্যালয়ে নির্দেশনা জারি করে পত্র পাঠান রেলভবনের সংস্থাপন শাখার উপ পরিচালক কামাল শেখ। 

স্থায়ী ও রাজস্ব খাতে নিয়োগের সুযোগ পেয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ মোটা টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এ বাণিজ্য করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য ও করোনা দুর্যোগে দীর্ঘ ৯/১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শ্রমিকদের ছাটাই শুরু করে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। 

করোনাকালে অফিস ও রেল যাত্রীসেবা সীমিতকরণ করার সুযোগে গত ২ জুলাই  জি/এলসি/বিবরন/১২/পর্ব-২ নং স্মারকের পত্রের মাধ্যমে রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় এলাকার ৫৮জন অস্থায়ী গেটম্যানকে (টিএলআর) ছাটাই করেন বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (ডিটিএস) স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত।

করোনা দুর্যোগে দুই মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে পড়া এসব শ্রমিক চাকুরী হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। শ্রমিক ছাটাইয়ের চিঠি বাতিল করে তাদের চাকুরী বহালের দাবিতে চাকুরীহারা ৫৮ শ্রমিক রেলমন্ত্রীসহ রেলভবনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

সম্প্রতি এমন ঘটনায় শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সেই ছাটাই চিঠি বাতিল করতে বাধ্য হন রেলওয়ে পাকশী বিভাগ। লালমনিরহাট বিভাগেও পেট বাঁচাতে এমন আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন শ্রমিকরা।

চাকরি হারা কাউনিয়ার গেটম্যান আমিনুর রহমান সাজু বলেন, করোনাকালে দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। স্ত্রী অন্ত:সত্বা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ দিকে চাকরি চলে গেলো। চাকরি ফিরে পেতে বিভিন্ন দফতরে ছুটছি কোনো কাজ হচ্ছে না। এতদিনের চাকরি হঠাৎ চলে গেলে সংসার চালাবো কিভাবে! 

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

এদিকে দীর্ঘ ৯ বছরের চাকরি হঠাৎ চলে যাওয়ার চিঠি পেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জেলার ভোটমারি স্টেশনের গেটম্যান বিনয় বর্ম্মন। 

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (ডিটিএস) স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত'র  সরকারী নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //