বরিশাল নগরীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির কফিন থেকে ২১ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার (১৯ জুলাই) ভোরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে মাদকের চালান পাচারের আগেই এ্যাম্বুলেন্স চালকের সহযোগিতায় তা চলে গেছে পুলিশের হাতে।
অবশ্য এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই খুঁজে পায়নি পুলিশ। সন্দেহ করা হচ্ছে করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত দারোয়ান কিংবা মৃত ব্যক্তির ছেলে জড়িত রয়েছে এ মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় আব্দুল হালিম নামের ৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধকে। তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের নলী তুলাতলা গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে। রবিবার রাত আড়াটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেবাচিমে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘নিয়ম অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের দেহ হাসপাতাল থেকে নিতে কফিন বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। সে কারণেই ওই ব্যক্তির মৃতদেহ দাফনের জন্য একটি কাঠের তৈরি কফিন আনা হয় বাহির থেকে।
মৃতদেহ বহন করা শেবাচিম এলাকার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক লিটন জানান, ‘কফিনে মৃতদেহ প্রবেশ করার ঠিক আগ মুহুর্তে ভেতরে কাগজে মোড়ানো কিছু বস্তু চোখে পড়ে। তখন মৃত ব্যক্তির ছেলে সোহাগ মিয়া ওগুলো ময়লা আবর্জনা বলে ছুড়ে ফেলেন। তবে কিছুক্ষণ পরে সেই আবার ওই কাগজে মোড়ানো বস্তু তুলে কফিনে ঢোকান এবং সে অবস্থায় কফিন অ্যাম্বুলেন্সে তোলে।
চালক লিটন আরো জানান, ‘সোহাগের আচারণ সন্দেহজনক মনে হয়। তাই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্চ করেন তিনি। তাৎক্ষনিকভাবে জাতীয় কল সেন্টার ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি অবগত করেন। মুহুর্তের মধ্যে এসআই মিজানের নেতৃত্বে কোতয়ালী মডেল থানার দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে কাগজে মোড়ানো প্যাকেট থেকে ২১ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয়। পাশাপাশি রাতে সোহাগসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
তথ্য নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) বলেন, ‘কফিন কোথা থেকে এবং কে এনেছে সে বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। তাছাড়া কফিনের ভেতরে কে গাঁজা রেখেছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে।
খুব শিগগিরই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানিয়েছে, ‘রাতে হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। তার কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল এবং খায়েরই দায়িত্বে ছিলেন করোনা ওয়ার্ডে। তাদের মধ্যে খায়ের মৃতদেহ বহনের জন্য কফিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
যদিও খায়েরের দাবি ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদের দেখানো মতেই সে ওই কফিন সংগ্রহ করে দিয়েছে। তবে তার এ বক্তব্যের পরেও করোনা উপসর্গে মৃত্যু ব্যক্তির কফিনের মধ্যে গাঁজা পাওয়ার বিষয়টিতে সন্দেহের তীর নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী এবং মৃতব্যক্তির ছেলের দিকেই ছুটছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh