তারকাদের বিচ্ছেদের অন্তরালে

অমুক তারকার বিয়ে আজ, তো কাল ওই তারকার ছাড়াছাড়ি! এসব নিয়ে ভক্ত-দর্শকের মাঝে কাদা ছোড়াছুড়ি চলেই। তাই কোনো তারকার বিয়ে হলে ভক্তরা প্রার্থনা করেন, যেন সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারেন। গত কয়েক বছর ধরে দেশের শো-শোবিজের অনেক জনপ্রিয় তারকার সংসার ভেঙেছে। তাতে দেশের সাধারণ মানুষও তারকাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। অনেকের মতে, বিয়েটা বেশির ভাগ তারকার কাছে ছেলেখেলা হয়ে গেছে।



গত কয়েক বছরে হাবিব-রেহান, তাহসান-মিথিলা, পারভেজ সানজারি-মিলা, বাঁধন-সনেট, নিলয়-শখ, হৃদয় খান-সুজানা, স্পর্শিয়া-রাফসান, নোভা-রায়হান সব শেষে বিবাহবিচ্ছেদের তালিকায় যুক্ত হলেন অপূর্ব। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সন্দেহ, অবিশ্বাস আর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার অভাবে মূলত সংসারে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের পর আবার অনেকে নতুন করে সংসার শুরু করেন। কারও সে সংসার টেকে না। মনে রাখতে হবে, তারকা শিল্পীরা সব ক্ষেত্রে মানুষের আদর্শ নন। কারও গান, কারও অভিনয় কিংবা সিনেমা বানানোর দক্ষতা ভালো লাগতে পারে; কিন্তু প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবন আলাদা। যে কোনো ব্যক্তির সংসার ভেঙে যাওয়া বেদনাদায়ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারিবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ও সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলেন, অন্যান্য দেশেও তারকাদের বিয়ে আর বিচ্ছেদ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সাধারণ মানুষ আলোচনায় আসে না। বিবাহবিচ্ছেদের কারণগুলো এতে জড়িত ব্যক্তিরাই ভালো জানবেন। তারকাদের বিবাহবিচ্ছেদে নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়ে। বাংলাদেশ এখনো পারিবারিক আবহের বাইরে না। যখন সমস্যাগুলো তৈরি হয়, তখন পরিবার আর বন্ধুদের নিয়ে মিটিয়ে ফেলা যায়। তাহলে কিন্তু ঘটনা এত দূর পর্যন্ত যায় না।


তারকাদের কেউ বিয়ের পর আবার কেউবা মা-বাবা হওয়ার পরও বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। সন্তান জন্মের পর বিচ্ছেদ সেই সন্তানের মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, বিচ্ছেদের ফলে এসব সন্তান মা-বাবা থেকে আলাদা হয়ে যায়।

মাহবুবা নাসরীন বলেন, আমাদের শিশুরা কিন্তু মা-বাবাকে আলাদা দেখে অভ্যস্ত না। যেসব দেশে দেখে অভ্যস্ত, সেসব দেশে শিশুদের দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্র নিয়ে নেয়। সেসব শিশু অনেক নিরাপত্তা পায়। আমাদের এখানে তো সে ব্যবস্থা নেই। এই ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ পরিবার ও পুরো সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, শোবিজের মানুষ সাধারণত আবেগপ্রবণ। মানুষের তো দুটি সত্তা থাকে একটা আবেগী, অন্যটা যৌক্তিক। একজন মানুষের জীবনে দুটোরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু আবেগী সত্তাটা যাদের বেশি, তারা অনেক বেশি সৃজনশীল হন, যে কোনো সিদ্ধান্তে ক্ষেত্রেও আবেগটাকে প্রাধান্য দেন।


তিনি আরও বলেন, তারকারা বিয়ের বাইরে প্রেম করতে খুব ভালো পারে। বিয়ের পর একজন মানুষের মধ্যে দায়বদ্ধতা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, কম্প্রোমাইজ এসব থাকতে হয়; কিন্তু অনেক তারকার মধ্যে এই ব্যাপারগুলোর ঘাটতি থাকে। বাস্তবজীবনে মানুষ যে অন্যরকম, এটা তাদের অনেকেরই উপলব্ধিতে থাকে না। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মুগ্ধতা ও মোহ ভেঙে যায়। অনেকের সঙ্গে চলতে হয়। তারকারা মুক্ত জীবনযাপন করে। সাধারণ মানুষের যেমন সংসার করার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে, তাদের মধ্যে তা থাকে না। সংসারটা করতেই হবে। এই ব্যাপারে তাদের একটা শিথিলতা আছে। আর্থিক ও সামাজিকভাবে বাধ্যবাধকতা থাকে না যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। তারা অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারে না

শুধু তারকারা নয়, সাধারণ মানুষের জীবনেও অনেক চড়াই-উতরাই থাকবে। এর মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা বড় সার্থকতা। কারণ, ভাঙন সব সময় একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //