লাইসেন্স ছাড়া চলছে পেশাদারি ক্লাব!

পেশাদার যুগে বাংলাদেশের ফুটবল প্রবেশ করেছে এক দশকেরও বেশি সময় আগে। এই সময়ে কত ক্লাবের উত্থান-পতন হয়েছে। নতুন ক্লাব এসে আবার তারা হারিয়েও গেছে। 

তবে পুরনো ক্লাবের মধ্যে প্রায় সবাই রয়েছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে। প্রথম তিন আসরের মতো সর্বশেষ আসরেও শিরোপা জিতেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। সেরা দল গড়ে সবচেয়ে বেশিবার শিরোপাজয়ী দলটির নামও এই আবাহনী। 

এর বাইরে শিরোপা জেতা দলের মধ্যে রয়েছে শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও বসুন্ধরা কিংস। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) লাইসেন্স নেই মোহামেডান ও জামালের।

শুরুর অপেক্ষায় থাকা পেশাদার লিগের এবারের আসরে অংশ নেয়া ১৩টি ক্লাবের মধ্যে কেবল চারটি ক্লাবেরই রয়েছে লাইসেন্স। বাকি নয়টি ক্লাব বছরের পর বছর খেলে যাচ্ছে এএফসির লাইসেন্স ছাড়া। 

এবার যখন ফুটবল মৌসুম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে তখন আবারো এই লাইসেন্সের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। নিয়মানুসারে প্রতি বছরের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এএফসি কাপে দলের নাম পাঠাতে হয়। গত আসরে ফেডারেশন কাপ ও পেশাদার লিগের শিরোপা জেতা ক্লাব খেলেছে এই আসরে। 

এক বছর আগে এএফসির ক্লাব কাপে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব সুযোগ না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কারণ যে চারটি ক্লাবের এই লাইসেন্স রয়েছে এর বাইরে যদি কোনো ক্লাব ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতে তাহলে খেলার সুযোগ হারাবে। এই বিষয়টি অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক ঠেকলে এটাই বাস্তবতা। রহমতগঞ্জ এমএফএস যদি চ্যাম্পিয়ন হতো তাহলে এএফসি কাপে কোনো ক্লাবই খেলার সুযোগ পেত না।

আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংসই কেবল এএফসির লাইসেন্সধারী ক্লাব হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের। এর বাইরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড, চট্টগ্রাম আবাহনী, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, টিম বিজেএমসি, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি, পুলিশ স্পোর্টিং ক্লাব চলছে এএফসির লাইসেন্স ছাড়া। 

গত মৌসুমে এএফসি থেকে সময় নিয়ে এখন ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন দলটি পাবে এএফসি ক্লাব কাপে খেলার সুযোগ। তবে সেটি যদি মোহামেডান, শেখ জামাল কিংবা রহমতগঞ্জের মতো কোনো ক্লাব যদি মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততো তাহলে এশিয়ার সেরা ক্লাব আসরে খেলার সুযোগ হারাতো বাংলাদেশ। দেশের ফুটবলের জন্য যা হতো লজ্জাজনক এক বিষয়। কিন্তু সেরকমটি কিছু হয়নি। 

প্রথমবারের মতো বসুন্ধরা কিংস খেলবে এএফসি কাপে। আর আবাহনীকে খেলতে হবে প্লে অফ। 

২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে পেশাদার সার্কিটে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এরপর নিয়ম মেনে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আসর। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এএফসির প্রেসক্রিপশন মেনেই মূলত প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগ থেকে পেশাদার লিগের যাত্রা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল ক্লাবগুলোর মধ্যে পেশাদারিত্ব আনা। কিন্তু সেটা কতটা হয়েছে তা তো এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

একটি ক্লাব পেশাদারি হতে হলে যা যা প্রয়োজন তার পুরোপুরি বাংলাদেশের কোনো ক্লাবেরই নেই। বয়সভিত্তিক দল, নিজস্ব ভেন্যু, লাইসেন্সধারী কোচিং স্টাফ কয়টি ক্লাবের রয়েছে সেই বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার। এএফসির লাইসেন্সই যেখানে নেই সেখানে পেশাদারি বলার তো খুব বেশি সুযোগও নেই। তবে সবচেয়ে আশার কথা এই যে, প্রথমবারের মতো বিপিএলে খেলতে এসেই পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। 

আশ্চর্য হবার মতো ঘটনা হচ্ছে, মোহামেডানের মতো দেশের বেশকিছু ঐতিহ্যবাহী ক্লাবই এখনো লাইসেন্স করে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেশাদার ফুটবল লিগে খেলার প্রধান শর্ত হচ্ছে ক্লাবগুলোর লাইসেন্স থাকা। এটি অনেকটাই বাধ্যতামূলক।

 কিন্তু দীর্ঘ একযুগেও এই শর্ত মানছে না বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্লাবই। ২০১৮ সালের একেবারে গোড়ার দিকে এএফসির ডেভেলপমেন্ট কমিটির দুই কর্মকর্তা যোগেশ দেশাই ও দোমেকা গ্রামান্দি ঢাকা সফরে এসেছিলেন। সে সময় ক্লাব লাইসেন্সের ওপর জোর দিয়েছিলেন এই দুই কর্মকর্তা। এরপর খুব বেশি কাজে আসেনি তাদের কথা। বাফুফেও তখন এ ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ভুলে যেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। 

বাফুফের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার অনেকটা পরিষ্কার ভাষায় বলেছিল, এএফসি ক্লাব লাইসেন্সের শর্তপূরণ না করলে কোনো ক্লাবকে আসন্ন পেশাদার লিগে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে উল্টো কথা। 

এ বিষয়ে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘নিয়ম মানলে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন দল এএফসি কাপে সরাসরি খেলার পেয়েছে। আরেকটি দল প্রিলিমিনারি রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাওয়ার কথা। নতুন যে পঞ্জিকা করা হয়েছে তাতে লিগ এএফসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে না। এ কারণেই ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন দল এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পাবে। তবে অবশ্যই ক্লাবটির লাইসেন্স থাকতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ক্লাবই এএফসি কাপে অংশ নিতে পারবে না’। 

এখন যদি লাইসেন্স না থাকা কোনো দল শিরোপা জেতে তাহলে সমস্যায় পড়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে এবার ক্লাব লাইসেন্সের বিষয়ে বাফুফের ভূমিকা কি হবে সেটাই দেখার বিষয়।

লাইসেন্স থাকা চার ক্লাব

আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ও বসুন্ধরা কিংস।

লাইসেন্স না থাকা নয় ক্লাব

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড, চট্টগ্রাম আবাহনী, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, টিম বিজেএমসি, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ও পুলিশ স্পোর্টিং ক্লাব। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //