মহানবীকে অবমাননাকর কথা বললে ছাড় নেই: প্রধানমন্ত্রী

মহানবীকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর কথা বললে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে জেনে বুঝে। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া চলবে না।

আজ রবিবার গণভবনে যুবলীগের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। যুবলীগের আসন্ন কংগ্রেস নিয়ে নির্দেশনা দিতে সংগঠনটির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। তবে এই বৈঠকে ডাক পাননি সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ বিতর্কিত কয়েকজন নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, যার ধর্ম তার কাছে। কাজেই সব ধর্মের মানুষ এদেশে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে। এটাই এদেশের নিয়ম। বাংলাদেশ যেন শান্তিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠে, সেটাই তার সরকার চায়।

ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আইডিটা হ্যাক করে এ ধরনের ঘটনা ঘটালো এবং সেটাকে কেন্দ্র করে যারা সমবেত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করলো- তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল সেটাই বড় কথা। এরপর থেকে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার সব জায়গায় ছড়ানো হচ্ছে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্যে কী? আর যারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভোলার বোরহানউদ্দিনে একটি হিন্দু ছেলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে সেখানে তার নাম দিয়ে কতগুলো মিথ্যাচার করা হয়েছে। যার ফেসবুক আইডি হ্যাকড করা হয়েছে তাকে আবার ফোন করে বিশ হাজার টাকা চেয়েছে। বলেছে, বিশ হাজার টাকা না দিলে তার ফেসবুক আইডিতে এমন সব কথা লিখবে যাতে তার ক্ষতি হবে। এই কথা শোনার পর পরই হিন্দু ছেলেটা থানায় গেছে। সে সেখানে একটা জিডি করা সত্ত্বেও পুলিশ কিন্তু তাকে গ্রেফতার করে রেখেছে। যে টেলিফোনটা করেছিল তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই আইডিটা হ্যাকিং নিয়ে ফেসবুক অপারেটরের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করেছে। তাদের কাছ থেকে সব তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে। যারা ফেসবুকে এই হিন্দু ছেলেটার আইডি হ্যাক করে এসব কথাগুলি লিখেছে, সে তো একজন মুসলমান ছেলে। একজন মুসলমান হয়ে কীভাবে নবী করিমকে (সা.) নিয়ে এ ধরনের বাজে কথা লেখে এবং আরেকজনকে জড়াবার চেষ্টা করতে পারে?

তিনি বলেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়েছে এগুলো না করার জন্য। পুলিশ বলেছিল, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরপরও পুলিশের ওপর চড়াও হলে নিজেদের বাঁচাতে তারা একটা ঘরে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেওয়ার পরও তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। সেখানে একজন এসআইয়ের গায়ে গুলি পর্যন্ত লাগে। সে সময় সেখানে এসপি ও ডিসি সবাই পৌঁছে যান। পুলিশকে রক্ষা ও সাধারণ মানুষকে বোঝাতেই তারা গিয়েছিলেন। পুলিশকে রক্ষার জন্য গুলি ছোঁড়া হলে বেশ অনেকজন আহত হয়। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু কনফার্ম বলা হয়েছে। আরেকজনের অবস্থা মুমূর্ষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কেউ সত্যিই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করলে এবং নবী করিম (সা.) এর প্রতি তার এতটুকু সম্মান থাকলে সে কীভাবে আরেকজনের ক্ষতি করার জন্য এ ধরনের জঘন্য কথাটা লেখে? এটাও আমার একটা প্রশ্ন। কাজেই আমি দেশবাসীকে বলবো, ধৈর্য্য ধরতে।'

তিনি বলেন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এসব ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। যখনই দেখা যায় দেশটা একটু ভালোভাবে চলছে, অগ্রগতি হচ্ছে- তখনই একটা শ্রেণী নানাভাবে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। এটা যেন কোনোভাবে করতে না পারে সেজন্য সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই। দেশবাসীর কাছে একটাই আহ্বান থাকবে, সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, কেউ যদি নবী করিম (সা.) বিরুদ্ধে কিছু লিখে থাকে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যের ক্ষতি করার জন্য যারা এ ধরনের কথা লিখবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ব্যবস্থা নেব। টেকনোলজি মানুষ যেমন ব্যবহার করতে পারে আবার কেউ অপকর্ম করলে সেটা ধরার টেকনোলজিও আছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //