বিচারের আশ্বাস

সিনহার মাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন

কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রধানমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রাশেদের মাকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। 

অপর দিকে নিহতের পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাশেদের পরিবারের সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী সিনহা রাশেদের মাকে ফোন করেন। রাশেদের মা নাসিমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘আমিও একই পথের পথিক। আপনাকে কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। আমিও পুরো পরিবার হারিয়েছি।’

নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ছেলেকে ফিরে পাব না। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে।’

এদিকে সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি মঙ্গলবার থেকে তদন্তকাজ শুরু করেছে। এদিন সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান কক্সবাজারে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে এক সমন্বয় সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার (৩১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরে তা পুনর্গঠন করা হয়।

গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর ২ আগস্ট কক্সবাজারে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. জাকির হোসেন। সোমবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ পরিদর্শন করেন ডিআইজি। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে কিছুই বলেননি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের (৩৬) মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে তার পরিবার। তারা বলছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও নিজ দেশে সিনহাকে এভাবে মারা যেতে হবে, তা তারা কখনোই ভাবেননি।

সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এরশাদ খান। সিনহা ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করেন।

সিনহা অবিবাহিত ছিলেন। দুই বোনের একমাত্র ভাই তিনি। বড় বোন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। ছোট বোন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং আমাজনে চাকরি করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //