গর্ভাবস্থায় কী খাবেন, কী খাবেন না

নারীদের জীবনের এক কঠিনতম অধ্যায় হলো গর্ভাবস্থা। এ সময় স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। এ সময় বেশি করে নিজের যত্ন ও খেয়াল রাখতে হয়, যেন গর্ভে থাকা শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। 

গর্ভাস্থায় নারীদের অনেক ধরনের সিকনেস দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বমি হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, মর্নিং সিকনেস, খাবারে অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ইত্যাদি। এসব কিছু প্রতিরোধ করতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

 

আর তাই পুষ্টিবিদরা বলেন এ সময় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় চার ধরনের পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। যেমন:

শাকসবজি ও ফলমূল: গাজর, শশা, টমেটো, ডালিম, বিট, পেয়ারা, আমড়া, কমলা, কলা ইত্যাদি। 

শর্করা জাতীয় খাবার: ভাত, রুটি ও আলুজাতীয় খাবার

প্রোটিনযুক্ত খাবার: মাছ, মাংস, ডিম, ছোলা ও ডাল। এগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস। 

দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই ও দুধ দিয়ে তৈরি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাবেন তা হলো:

ডিম


ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, জন্মগত ত্রুটি দূর করে। গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ ডিম খাওয়া ভালো। যদি ওমলেট বা ডিম পোচ খেতে চান, তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ডিম যেন কাঁচা না থাকে।

শস্য ও ডাল 

শস্য ও ডাল থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায়। এছাড়া জিংক ও ক্যালসিয়ামও পাওয়া য়ায়।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও আয়রন। এগুলো শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া এতে রয়েছে কপার, যা শরীরে আয়রন দ্রুত শোষণ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা বেক করে খেতে পারেন । 

বাদাম

বাদামে রযেছে ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। এছাড়া রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, যা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি কমায় এবং শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে সাহায্য করে।

চর্বি ছাড়া মাংস

মাংস থেকে পাওয়া যায় প্রোটিন ও আয়রন, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এসময় মাংস খান। 

কমলালেবু ও এর রস

এক গ্লাস কমলার রস থেকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করবে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। 

দই


দইয়ে দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া এতে ভিটামিন বি ও জিংক রয়েছে। একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে জন্মের সময় শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে এবং মা পরবর্তীতে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারেন।

ওটস

ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন ও ভিটামিন বি৬ থাকে। সকালবেলায় এক বাটি ওটমিল খাওয়ায় সকালের বমি ভাবটা একটু কমতে পারে। গর্ভাবস্থায় অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন। ওটসের প্রচুর ফাইবার আপনাকে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। 

সবুজ শাকসবজি

শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শিশু ও মা দুজনকেই সুস্থ রাখবে। তাই গর্ভাবস্থায় সবুজ শাকসবজিসহ সব ধরনের শাকসবজি খান। 

মাছ 

বিভিন্ন ধরনের মাছ আপনার খাবারের মেন্যুতে রাখা উচিত। মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন। দেশি ও সামুদ্রিক সব মাছই পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অধিক পরিমাণে খেলে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় পদার্থ থাকে।

দুগ্ধজাত খাবার

দই, পনির, দুধ ইত্যাদি দুগ্ধজাতীয় খাদ্য একজন নতুন মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারি। দুধ ক্যালসিয়ামেরও একটি ভালো উৎস। এ-জাতীয় খাদ্য মা ও নবজাতক শিশুর শারীরিক পুষ্টিচাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মটরশুঁটি ও শিম


শীতের সবজি হিসেবে আমরা প্রায় সবাই শিম ও মটরশুঁটি খেয়ে থাকি। কিন্তু জানেন কি, এসব সবজি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের একটি বড় উৎস। বিশেষ করে যদি আপনি একজন নিরামিষভোজী হন, তাহলে এসব সবজি থেকে আপনার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয় তা হলো:

১. গর্ভাবস্থায় কোনো খাবার পুরোপুরি সেদ্ধ না করে, আধা সেদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। ডিম ও মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে খেতে হবে। 

২. এসময় খুব বেশি মুরগি বা গরুর কলিজা খাওয়া ঠিক নয়। 

৩. দিনে এক বা দুই কাপের বেশি কফি বা চা পান করা যাবে না। যদি গর্ভবতী মায়ের ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থাকে তাহলে তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম গ্রহণ করে। মিসক্যারেজের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

৪. গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা উচিত নয়। এতে আপনি পুষ্টিহীনতায় ভুগবেন। গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া ভালো লক্ষণ, কিন্তু আপনার ওজন যদি খুব বেশি বেড়ে যায়, তাহলে খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিন এবং হালকা ব্যায়াম করুন। তবে তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়া উচিত নয়। এতে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

৬. অপাস্তুরিত দুধ বা কাঁচা দুধে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ভালো করে না ফুটিয়ে দুধ পান করা যাবে না। অপাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন- নরম পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //