লকডাউনে ঘরে বসে ওজন বাড়ছে, কী করবেন?

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে জীবন কাটাচ্ছেন এমন ৪৮ শতাংশ লোকই বলছেন, ঘরে বসে থেকে থেকে তাদের ওজন বেড়ে গেছে। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। 

বিশেষ করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে অনেকেই অভিযোগ করছেন, তাদের পেট মোটা হয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু জরিপেও বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে, যে লকডাউনের মধ্যে মানুষের ওজন আসলে কতটা বেড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক জরিপেই দেখা যাচ্ছে, মানুষের পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যের প্রাপ্যতা ও জীবনধারার পরিবর্তন– এগুলো মানুষের ওজনে প্রভাব ফেলছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কিংস কলেজ ও ইপসোস-মোরির জরিপে অংশ নেয়া দুই হাজার ২৫৪ জন লোকের ৪৮ শতাংশই বলেছেন, লকডাউনের সময় তাদের ওজন বেড়ে গেছে। সমপরিমাণ লোক বলেছেন, তারা এ সময় দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতায় ভুগেছেন। আর ২৯ শতাংশ বলেছেন, লকডাউনের সময়টায় তাদের মদ্যপানের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

অনেকে এ প্রশ্ন করতেই পারেন- এক্ষেত্রে ওজনের চাইতে মানসিক স্বাস্থ্যটাই অপেক্ষাকৃত বড় সমস্যা কিনা।

পুষ্টিবিদ প্রিয়া টিউ বলেন, মানুষ যখন দুশ্চিন্তা ও চাপের মুখে পড়ে তখন এটা মোকাবিলা করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে তার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। লকডাউনে কারো ওজন যদি সামান্য বেড়েও যায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বা অপরাধবোধে ভোগা উচিৎ নয়। তাহলে লকডাউনের আরো নানা দুশ্চিন্তার সাথে এটাও যোগ হয়ে বরং মানসিক চাপ আরো বাড়িয়ে দেবে।

এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু উপায় আছে যার ফলে লকডাউনের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা না করে বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এ দুটোই ভালো রাখা যাবে।

প্রিয়া টিউ বলেন, যেটা করা উচিত তা হলো খাদ্য তালিকা থেকে কী বাদ দিতে হবে সে চিন্তা না করে বরং কী যোগ করা দরকার তা নিয়ে ভাবা। আপনি এভাবে ভাবতে পারেন - ‘আমি কি প্রতিদিন যথেষ্ট সবজি ও ফল খাচ্ছি? আমি কি কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছি নাকি হোলগ্রেইন খাচ্ছি?’ প্রতিদিন অতিরিক্ত ফল খান। মাঝে মাঝে এক টুকরো কেক খেলে ক্ষতি নেই।

তিনি বলেন, একসাথে ১০টি অভ্যাস পরিবর্তন করার বদলে একটি একটি করে শুরু করুন। আপনি যদি ভাবেন আমি চকলেট ও কেক খাবো না, তাহলে আরো বেশি খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু তা না খেলে আপনি এর পরিবর্তে এমন একটা কিছু খাবেন যা আপনি আগে খাননি।

অনিশ্চিত সময়ে মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় এর প্রভাব পড়ে খাওয়ার অভ্যাসের ওপর। মনোবিজ্ঞানী কিম্বার্লি উইলসন বলেন, খাদ্যের সাথে মানুষের একটা আবেগের সম্পর্ক আছে। বহু মানুষই দুশ্চিন্তার সময় অজান্তেই তাদের মনোবল বাড়াতে খাদ্যকে ব্যবহার করে। লকডাউনের সময় মানুষ যদি তার স্বাভাবিক খাবার খেতে না পারে, শরীরচর্চা করতে জিমে যেতে না পারে - তখন তার একটা মানসিক সংকট হয়।

তিনি আরো বলেন, কেউ যদি বলে যে সে লকডাউনের মধ্যে কোনো একটা বিশেষ খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে পারছে না, তাহলে তাকে বলতে হবে যে- ঠিক আছে, এতে কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সে এভাবেই চলতে পারে।

শরীরচর্চা প্রশিক্ষক ও বিবিসির ফিটনেস বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জানা ভ্যান ডাইক বলেন, তিনি বহু লোককে দেখেছেন যারা তাদের ব্যায়ামের রুটিন মেনে চলতে সমস্যায় পড়ছেন ও তার নিজেরও এমন হয়েছে।

তিনি বলেন, লকডাউনের কথা শোনার পর আমার মনে হয়েছে আমি যে ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকি সেখানে আমি ব্যায়াম করবো কী করে? সেখানে তো শরীরচর্চার কোনো জায়গা বা যন্ত্রপাতি কিছুই নেই। উপায় নেই বলেই আমি ঠিক করে নিলাম ঘরের মধ্যে কোন কোন ব্যায়ামগুলো আমি করতে পারবো। প্রথম সপ্তাহটা কষ্ট হলো, কিন্তু এখন আমার ভালোই লাগছে।

তার মতে, পরিবর্তিত অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারাটাই আসল কথা। ঘরের মধ্যে একবারে এক ঘণ্টা ধরে শরীরচর্চা করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

জানা ভ্যান ডাইক বলেন, সকালে কফি খাবার পর ১৫ মিনিট ব্যায়াম, দুপুরে ও রাতে খাবারের পর ১৫ মিনিটের জন্য হাঁটতে বের হওয়া- এগুলো চেষ্টা করতে পারেন। আপনার পাড়ার মধ্যেই ১৫ মিনিট হেঁটে আসুন। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একটা লম্বা সময়ের জন্য মুক্ত বাতাসে হাঁটুন- এগুলো মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //