স্যানিটাইজারে করোনাভাইরাসের জীবানু ধ্বংস হচ্ছে তো?

করোনা আতঙ্কে পুরো পৃথিবী। ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে পড়া হচ্ছে মাস্ক। মেনে চলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। আরো বেশি সতর্ক থাকতে সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে বলা হচ্ছে। আবার এ বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যানিটাইজার। কিন্তু স্যানিটাইজারগুলো কতোটা উপকারী তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

স্যানিটাইজার ব্যবহারের আগে কী নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে?

প্রথমত, যাঁরা বাড়িতে রয়েছেন বেশির ভাগ সময় তারা সাবান পানিতে হাত ধুলেই হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, সাবান দিয়ে হাত ধোয়াই ভালো। তবে যারা বাইরে বেরচ্ছেন, রাস্তায় যেহেতু সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া সব সময় সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

ভারতীয় চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে, তাতে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে কি না। ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকলে তবেই সেই স্যানিটাইজার স্প্রে-তে কাজ হবে।

অমিতাভবাবু সতর্ক করেন, বাজারে নানা রকম সুগন্ধী স্যানিটাইজার কিংবা স্প্রে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সবকটাই যে ভাইরাসনাশক এমনটা কখনো নয়। বরং করোনা আবহের আগে যে সংস্থাগুলি স্যানিটাইজার বিক্রি করত, তাদের থেকে কেনাই ভালো। খানিকটা হলেও এতে নিশ্চিত থাকা যাবে।

ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে বা লিকুইড মানেই কি ভাইরাস মরবে?

স্যানিটাইজারের মতোই ক্ষেত্রেও যদি অ্যালকোহলের পরিমাণ ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হয়, তবেই ভাইরাস মরবে। অমিতাভবাবু জানালেন, অফিস থেকে ফিরে অনেকেই চামড়ার ব্যাগে জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করে নিচ্ছেন, ভাবছেন আর চিন্তা নেই। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল। জীবাণুনাশক স্প্রে মানেই তা ভাইরাস মারবে, এমনটা নয়। সব সময় দেখে নিতে হবে অ্যালকোহলের পরিমাণ। না জেনেই ব্যাকটিরিয়ানাশক স্প্রে ব্যবহারের ফলে একটি সুরক্ষার অনুভূতি তৈরি হচ্ছে, যেটা আসলে মিথ্যা। জাতীয় কোনও ভুয়া যন্ত্রে যাতে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়, তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনেরই। 

 

কী ধরনের অ্যালকোহল ব্যবহার হলে তা ভাইরাস মারতে সক্ষম?

মেডিসিনের চিকিৎসক কল্লোল সেনগুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, ইথানল বা ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল থাকলে সেটিও কাজ করবে। কিন্তু তার পরিমাণ যেন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হয়।

কেন সাবান জল বা বিশেষ পরিমাণ অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?

ভাইরাসের লিপিড আস্তরণকে নষ্ট করে দিতে পারে সাবান জল বা ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল। শুধু জলে যা কখনো সম্ভব নয়। জলে দ্রবীভূত হয় না বলেই ভাইরাস সে ক্ষেত্রে মরবে না। অ্যালকোহলের পরিমাণ কম হলে তার ভাইরাসনাশক ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কথা বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দমবাবু।

হাত তৈলাক্ত থাকলে বা চামড়ার ব্যাগ জাতীয় পদার্থে কি স্প্রে বা স্যানিটাইজার ভাইরাসনাশক হিসাবে কাজ করবে?

হাত তৈলাক্ত থাকলে, ধুলো লেগে থাকলে স্যানিটাইজার বা স্প্রে- কাজ সম্পূর্ণ হবে না। সাবান জল সে ক্ষেত্রে তেলটাও সরিয়ে দিতে পারবে। মারতে পারবে ভাইরাসও, কারণ একটা লিপিড অন্য লিপিডে দ্রবীভূত হয়ে যাবে। ফলে হাত পরিষ্কার হয়ে গেল। কথা জানান অরিন্দমবাবু। কল্লোলবাবু বলেন, চামড়ার ব্যাগ বা জাতীয় জিনিস একান্তই ব্যবহার করতে হলে তা বাইরে থেকে ফিরে দরজার বাইরে রেখে দিতে হবে এক জায়গায়। পরিষ্কার করতে হলে সে ক্ষেত্রে অ্যালকোহল সোয়াব ব্যবহার করা যেতে পারে, সেখানেও ইথাইল অ্যালকোহলের পরিমাণ দেখে নিতে হবে।

ব্লিচিং পাউডার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়?

ঘরের মেঝে, বেসিন, শৌচাগার, বারান্দায়, ঘর মুছতে ব্লিচিং পাউডার বা কড়া কোনও ফিনাইল ব্যবহার করতে হবে। এগুলিও ভাইরাসনাশক। কিন্তু জামাকাপড় কাচার সময় সাবান জলই যথেষ্ট, এতে ব্লিচিং পাউডার দিলে জামা নষ্ট হয়ে যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //