‘এক্সট্রাকশন’ ছবিতে ঢাকাকে যেভাবে দেখানো হলো

গত ২৪ এপ্রিল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটির বেশি বাজেটের ‘এক্সট্রাকশন’ সিনেমাটি। সিনেমাটি মুক্তির আগে ঢাকাকে কেন্দ্র করে হাইপ তোলে, তবে মুক্তির পর থেকে সমালোচনার জোয়ারে ভাসছে ছবিটি। 

ছবিটি নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা হলেও মুক্তির পর সমালোচনার কারণ অবশ্যই আছে। তবে তার আগে চলুন জেনে নেই ‘এক্সট্রাকশন’ দৃশ্যায়নের কিছু তথ্য।

সিনেমাটির ঢাকায় শুটিং হওয়ার কথা থাকলেও কিছু প্লেট শট ছাড়া এই ছবির কোনো দৃশ্যধারণের কাজ হয়নি। প্লেট শট ক্রোমায় বসানো হয়েছে অভিনেতাদের। সিনেমাটিতে যে ঢাকার পুরান ঢাকাকে দেখা যাচ্ছে, তা ভারতের আহমেদাবাদ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সেখান থেকেই শুরু হয় ছবিটির শুটিং। এছাড়াও ছবিটির বেশকিছু অংশের শুটিং হয়েছে থাইল্যান্ডে, ভারতের মুম্বাই ও অন্ধ্রপ্রদেশে।

তবে বাংলাদেশের দর্শকরা নিজ দেশের ঢাকাকে নিয়ে হলিউডের সিনেমা হচ্ছে তাতে বেশ হাইপ তুলেছিলেন। অবশ্যই সিনেমাটি দেখার পর সেই হাইপ আর নেই। প্রত্যেকে অভিযোগ তুলেছেন, বাংলাদেশকে ছোট করার পাশাপাশি, দেশের ভাষা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছোট করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে নানা ভুল বের করে সিনেমাটির সমালোচনা করেন দর্শকরা।

সিনেমাটির গল্প নিয়ে কিছু ধারণা নেয়া যাক। সিনেমায় বাংলাদেশের ঢাকাকে দেখানো হয়েছে পৃথিবীর নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে। সিনেমাটিতে মাফিয়া চরিত্রে রয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। তার ৪ বছর বয়সী ছেলে অভিকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে আসে বাংলাদেশের ড্রাগ মাফিয়া আমির আসিফ। এদিকে পঙ্কজ ত্রিপাঠি জেলে বন্দি। জেলে থাকার কারণে তার বাইরের সব কর্ম (অপকর্ম) দেখাশোনা করে তার প্রধান সহকারী রণদীপ হুদা। যার কারণে রণদীপের কাঁধে দায়িত্ব এসে পড়ে তার ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া। রণদীপ নিজে এই কাজ করতে পারবেন না, তাই  টেইলর রেকরূপী ক্রিস হেমসওর্থকে ভাড়া করে নিয়ে আসেন ঢাকায়। এরপর অ্যাকশন মারপিটে দর্শক ধরে রাখলেও বাংলাদেশি দর্শকের মনে আঘাত লাগতে শুরু করে তখনই, যখন দেশের প্রতি অন্যদেশের মানুষের নিকট বাংলাদেশকে ছোট করে দেখানো হচ্ছে। 

সিনেমাটি নিয়ে সমালোচনার কারণ আসলে কোথায়? কি কারণে এতো সমালোচনা চলছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বেশকিছু সিনেমাগ্রুপ ঘেটে এর কারণ জানার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে বিস্তর রিভিউ দিয়েছেন।

চলুন জেনে নেই কী কী বিষয়ে সমালোচনা চলছে:

সিনেমার শুরুতেই  ঢাকার কংক্রিটের জঙ্গল। এরপর দেখা গেল কয়েকটা বস্তি, ট্রাক, বাস আর অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিন্তু দেখা মিললো না রিকশার। কানে ভেসে আসলো ঢাকার রাস্তায় গালাগালি সংলাপ। আবার সিএনজির পেছনে লেখা (সার্ভসাক্তিমান) যা দেশের কোনো সিএনজিতে লেখা নেই। এছাড়াও চোখে পড়ার মতো একটি বাসে লেখা (হাসিনা পরিবহন) এগুলোর সাথে সাথে গলি দোকান বিক্রির লেখা নিয়ে চলছে মন্তব্য। 

ছবিটিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছোট করে দেখানো হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে পুলিশ, এলিট (র‍্যাবের মতো একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী)—মাফিয়া দলের হয়ে কাজ করছে। ভারতের মাফিয়ার ছেলে যেনো ফেরত না যেতে পারে সেজন্য পুরান ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাছাড়া ছবিতে ঢাকার কোনো ঐতিহ্য নেই। রিকশার শহর ঢাকাকে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশার শহর হিসেবে।

বাংলাদেশের সিনেমাতেই ঢাকা শহর সেভাবে উঠে আসেনি। ঢাকা শহরের রূপ, সংস্কৃতি নিয়ে খেলা করা হয়েছে। বাংলা ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের উপর দোষারোপ চলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে এভাবে উপস্থাপন করার সাহস তারা কি করে পেলো এ নিয়েও চলছে ক্ষোভ। ঢাকা শহর নিয়ে এত বাজে গবেষণা কেনো? এসব প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

হলিউডের রথী–মহারথীদের হাতে বানানো সাড়ে পাঁচশ কোটির টাকার ছবি নিয়ে দর্শকরা বলছেন, অন্য সবার মতো এক্সাইটেড ছিলাম যে রুশো ব্রাদার্স ঢাকা শহরকে ঘিরে সিনেমা করছে। হয়তো আমাদের দেশকে সুন্দর করে দেখানো হবে তবে কিছুই হলো না। দেখতে পেলাম উল্টো যেনো আমরা পৃথিবীর নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। 

সিনেমাটি দেখার পর নির্মাতা রাশিদ পলাশ স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ছবিটি আসলে বাণিজ্যিক বিষয়। বাণ্যিজের কারণে আমাদের দেশের উপর ক্রিয়েটিভিটি দেখানো হয়েছিলো। কারণ নেটফ্লিক্স আমাদের মার্কেট ধরার জন্য এরকম পন্থা অবলম্বন করে। অবশ্য দেশকে এভাবে উপস্থাপন করার পর তাদের উপর অনেকের আস্থা উঠে গেছে। 

এদিকে ছবিটির সঙ্গে বাংলাদেশ অংশের যুক্ত ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেতা তারিক আনাম খান ও তার ছেলে আরিক আনাম খান। 

আরিক আনাম খান জানান,  চিত্রনাট্যে যা ছিলো তার সাথে অবগত নন তারা। কীভাবে কি হয়েছে বা তারা কীভাবে এই ছবি চিত্রনাট্য করেছেন তা জানা নেই। 

আরিক বলেন, এই সিনেমা তৈরির আগে প্রোডাকশনের একটা চুক্তি হয়েছিলো। যেখানে উল্লেখ ছিলো ছবিতে যেনো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়। সরকারের সাথেও বোঝাপড়া হয়েছিলো।

সিনেমাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার বিষয় উঠে এসেছে। তাই নেটফ্লিক্স বন্ধ করা উচিত কি না এ নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাইবার সিকিউরিটি ক্রাইমের এডিসি নাজমুল ইসলাম। 

তিনি লেখেন, এই ছবিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আপনাদের মতামত কামনা করছি আমরা নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ক্সট্রাকশন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //