নীতিমালার যাঁতাকলে পৃষ্ঠ নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা

দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বেতন বঞ্চনার শিকার বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকেরা। সরকারি নীতিমালা না থাকাই প্রধান অন্তরায়।

২৮ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক। নীতিমালার দোহাই দিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তাদের বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত করেছে। একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠদানরত শিক্ষকরা দৈনিক ১-২টি ক্লাস ক্লাস নেন। কিন্তু অনার্স কোর্সের শিক্ষকরা দৈনিক ৪- ৫টি ক্লাস নিতে হয়। 

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকরা ২টি বই পড়ান। আর অনার্স কোর্সের শিক্ষকরা ২৫-৩০টি বই পড়ান। কিন্তু দুঃখের কথা হলো অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকেরা সরকারের কাছ থেকে কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। কলেজের ফান্ড থেকে পোশাক পরিস্কার বাবদ ও যাতায়াত বাবদ কিছু সম্মানি পেয়ে থাকেন। যা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। 

একই কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছেন। আর নন-এমপিও অনার্স কোর্সের শিক্ষকগণ ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকের কাছে হতে হয় লাঞ্ছিত। এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ নন-এমপিও অনার্স কোর্সের শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয় না। কলেজের বিভিন্ন কাজে অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। একই কলেজে দুই নীতি যা একটি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নে বড় বাঁধা। 

একই এমপিওভুক্ত কলেজে যদি ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রি শাখার শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারে, অন্যদিকে মাদ্রাসা পর্যায়ের কামিল ও ফাজিল স্তরের শিক্ষকেরা এমপিওভুক্ত হতে পারে, এছাড়া একই পদ্ধতিতে নিয়োগ পেয়ে জাতীয়করণকৃত ৩২০টি অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকেরা সরকারিকরণের অপেক্ষায় রয়েছে তাহলে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা কেনো এমপিও বঞ্চিত থাকবে? 

অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তির জন্য মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দুটি নির্দেশনা ও জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির দুটি সুপারিশ থাকার পরেও শুধুমাত্র সরকারি নীতিমালার দোহাই দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের বছরের পর বছর বেতন বঞ্চিত করে রেখেছে, এতে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় শিক্ষকরা।

শিক্ষা অধিদপ্তরের হতে সাবেক দুজন মহাপরিচালক মহোদয় অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট আর্থিক চাহিদা প্রেরণ করলেও মন্ত্রণালয় কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছেন না। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগের আপিল অযোগ্য একটি চূড়ান্ত রায়ে শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওভুক্তির কথা উল্লেখ করা হলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আটকে রয়েছে শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও এমপিও দেওয়ার বিষয়টি। 

বর্তমানে জনবল কাঠামো সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটির প্রথম সভাতে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের সংশোনাধীন জনবল কাঠামো নীতিমালাতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ সভায় এসে তা কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে বাতিল করা হয়েছে।

তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী  মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের সংশোনাধীন জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও প্রদান করে। দীর্ঘ ২৮ বছরের শ্রমদাস হতে শিক্ষকদের মুক্তিদানে বাধিত করবেন।

নিবেদক
বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের পক্ষে- 
শাহ মো. রকিবুল ইসলাম 
প্রভাষক ও প্রচার সম্পাদক 
স্বাধীনতা বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //