আমি একজন বেতনহীন বেসরকারি শিক্ষক

আমি ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (১০৭১৩৩) আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। 

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ২০ ডিসেম্বর ২০১৮-তে মেধা তালিকা প্রকাশ করে ১০ জানুয়ারি ২০১৯-এ আমার নামে নিয়োগ সুপারিশপত্র ইস্যু করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি নির্ধারিত একমাস সময়ের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই। যোগদানের তারিখ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পনেরো মাস ধরে ননএমপিও শিক্ষক হিসেবে পাঠদান কার্যক্রমে যুক্ত আছি।

সরকারি বিধি মোতাবেক যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে যোগদান করেও এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে অর্ডারভুক্ত) হতে পারিনি আজো। যোগদানের পর মার্চ-১৯ এবং মে-১৯-এই দুবার অনলাইনে আবেদন করি। দুবারই আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের ফিমেইল এবং ডিডি থেকে এমপিও আবেদনটি ইএমআইএস সেলে নিশ্চয়ন না করে ফেরত আসে। দুবারই কারণ হিসেবে স্নাতকসহ ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার ডিপ্লোমাধারীদের এমপিওভুক্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশ লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা (কুমিল্লা)। তারা জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনা ছাড়া ফাইল পরবর্তী ধাপে নিশ্চয়ন করবেন না।

একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যর্থ হয়েছি। এমপিওভুক্তি আর কপালে জোটেনি! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়নি আমার পক্ষে। বাংলাদেশের একাধিক জাতীয় পত্রপত্রিকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, এনটিআরসিএ-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখালিখি করেছি। প্রায় প্রতিটি ফেসবুক লাইভে বিষয়টির মানবিক দিক তুলে ধরে কমেন্টস করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, এনটিআরসিএ-তে একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন-নিবেদন করেছি। ধরনা দিয়েছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত জুলাই মাসে মানববন্ধন করেছি। এখনো কর্তৃপক্ষের নজর মেলেনি!

চার মাস হলো দেশে কভিড-১৯ সংকট চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এনটিআরসিএ-এর নিয়োগ হওয়া ও এমপিওভুক্ত হতে না পারায় প্রতিষ্ঠান থেকেও কানাকড়ি মেলেনি! বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কর্মস্থল। যাতায়াত বাবদ প্রতিদিন গুনতে হয় ১৫০ টাকা। দুপুরে খেতে হয় হোটেলে। বিশ্বাস করুন, গত ১৫ মাসে ছুটি নিয়েছি মাত্র তিনদিন! একজন আইসিটি শিক্ষক হিসেবে স্বল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে এটুআই এবং মুক্তপাঠ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে ডজন খানেক কোর্স করে সনদ অর্জন করেছি। প্রাতিষ্ঠানিক অন্যসব দায়দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে চলেছি।

গত জুন মাসের ৯ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সমন্বয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় মাননীয় মন্ত্রী ৮২২ আইসিটি শিক্ষকের সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায়, মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের এমপিওভুক্তিকরণে দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

সারোয়ার মিরন
সহকারী শিক্ষক, আইসিটি,
রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রামগতি, লক্ষ্মীপুর।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //