রোগবালাই বাড়ার সাথে নগরায়নের সম্পর্ক

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গাছ কেটে ফসলের ক্ষেত তৈরি এবং বাসাবাড়ি গড়ে তোলার কারণে প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় এমন রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।

এক গবেষণা থেকে জানান যাচ্ছে, প্রাকৃতিক বনভূমি উজাড় করার ফলে বন্য পশুপাখি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর তাদের জায়গায় আসে এমন সব প্রাণী যার থেকে মানুষের মধ্যে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, নতুন আবিষ্কার হওয়া প্রতি চারটি সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে তিনটিরই উৎপত্তি এ ধরনের প্রাণী। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক ভূমি বিনষ্ট করার ফলে ছোঁয়াচে রোগ বহনকারী প্রাণীদেরই বেশি সুবিধে হয়েছে। এবং আমরা যখন বন-জঙ্গল কেটে সাফ করে সেখানে ফসলের ক্ষেত তৈরি করি, গোচারণভূমি তৈরি করি কিংবা জনপদ গড়ে তুলি তখন প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেক বেশি, বলছে এই গবেষণা। বিশ্বের মোট আবাসযোগ্য ভূমির অর্ধেক মানুষের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্বের মোট আবাসযোগ্য ভূমির অর্ধেক মানুষের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষক রোরি গিবস বলেছেন, আমাদের গবেষণা থেকে জানতে পেরেছি যেসব প্রাণী মানুষের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকে, তাদের মধ্যে থেকে মানুষের শরীরে রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

বনভূমি উজাড় করে ক্ষেত-খামার এবং বাসাবাড়ি তৈরি করার ফলে বহু বন্যপ্রাণী এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। গণ্ডারের মতো দীর্ঘজীবী প্রাণী, যাদের বসবাসের জন্য বিশেষ ধরনের পরিবেশের প্রয়োজন হয়, বনভূমি ধ্বংস করা হলে তাদের জায়গায় বংশবৃদ্ধির সুযোগ বেড়ে যায় এমন সব প্রাণীর যারা কম দিন বেঁচে থাকে, যেমন ইঁদুর বা কবুতর।

ইঁদুর জাতীয় প্রাণী, যারা বেশ কয়েক ধরনের রোগের জীবাণু বহন করে, নগর এলাকায় তাদের সংখ্যা বাড়ে কারণ সেখানে অন্য সব প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ওই গবেষণায় ৭,০০০ প্রজাতির ওপর ১৮৪টি গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে যে এদের মধ্যে ৩৭৬টি প্রজাতি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন সব রোগের জীবাণু বহন করে।
ইন্দোনেশিয়ার একটি বাজারে বাদুড় বিক্রি হচ্ছে।

যখন কোন রোগের জীবাণু প্রাণীদেহ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় স্পিলওভার। রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী এই স্পিলওভারের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে বলে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করছেন। যেমন, আমরা জানি যে বন্য প্রাণীর শিকার, ব্যবসা এবং তাদের আবাসভূমি ধ্বংস হওয়ার ফলে মানুষের সাথে তাদের সংস্পর্শ বাড়ে। ফলে নতুন ধরনের রোগের জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

বলা হয়ে থাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সূচনা বাদুড় থেকে। কিন্তু অন্যান্য বন্য প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে এই জীবাণু স্পিলওভার করেছে। এখানে বন্য প্রাণীর সাথে ব্যবসার একটা যোগাযোগ রয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারে প্যাঙ্গোলিন বা বনরুইয়ের একটা ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

নতুন এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে। এতে দেখানো হয়েছে যে বন্যপ্রাণী যখন তার নিজস্ব পরিবেশে থাকে তার তুলনায় মানুষের তৈরি পরিবেশে থাকার ফলে তাদের দেহে রোগ জীবাণুর উপস্থিতি বেড়ে যায় দ্বিগুণ। বনজঙ্গল থেকেই রোগ-বালাইয়ের উৎপত্তি বলে মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা রয়েছে এই গবেষণা তাকে খণ্ডন করেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক কেট জোন্স বলছেন, আগামী দশকগুলোতেও কৃষি এবং নগর এলাকার জন্য জমির চাহিদা বাড়তে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় জমির ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটছে সেখানে নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে। কারণ, সেখানকার বন্যপ্রাণী থেকে রোগ জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও তখন বেড়ে যাবে।-বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //