বন্ধু চল ...

‘বন্ধু চল, রোদ্দুরে/ মন কেমন, মাঠজুড়ে/ খেলবো আজ, ঐ ঘাসে/ তোর টিমে তোর পাশে।’

করোনাভাইরাসের কারণে মাঠ দাপিয়ে, পাড়া কাঁপিয়ে বন্ধুদের ছোটাছুটি নেই! নেই স্কুল বা পাড়ার মাঠে বন্ধুদের নিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা! তাই তো বন্ধুদের চিৎকার করে বলা যাচ্ছে না ‘বলটা দে ...’, কিংবা বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে ছাদের চিলেকোঠায় বসে মন খারাপগুলোও বলে যাওয়া যাচ্ছে না! 

তাই বলে গল্পেরা কিন্তু ওই ঘাসের আড়ালে মুখ লুকিয়ে নেই, বরং ঠিকই সেলফোনের অ্যান্টেনা বেয়ে বন্ধুদের মনে পৌঁছে যাচ্ছে। 

তাই বলি, কি আর করা! প্রতিটি নতুনের সাথে মানিয়ে নিতে পারাটাই জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এজন্য বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে না সেই মার্চ মাস থেকে, এমনকি বন্ধু দিবসটাও চলে গেল কেমন সাদামাটাভাবে। বন্ধুত্বের উপহারও দেয়া গেল না। না বন্ধুরা, মন খারাপ করো না। বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। তাই এখনকার নতুন পরিবেশে প্রথম কাজ হলো নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করা ও পরিবার-স্বজন ও বন্ধুদের নিরাপদ রাখা। 

বন্ধু মানে কি শুধুই গল্প-আড্ডা-গান-খেলা, তা নয় মোটেই। এজন্য এখনকার বাস্তবতায় শুধু বড়দেরই নয়, তরুণ ও কিশোরদেরও দায়িত্ব বেড়ে গেছে অনেক গুণ। প্রথমেই খোঁজ নাও, তোমার বন্ধুরা কে কেমন আছে? ওদের মা-বাবার আয় রোজগারের অবস্থা কেমন এখন? প্রতি বেলায় খাবার খেতে পারছে তো বন্ধুরা? তাদের পরিবারের কেউ করোনাক্রান্ত হলে তাদেরও দূরে থেকেই সাহায্য করতে পার। ওদের বাসায় রান্না করা খাবার, ওষুধ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে। বন্ধুদের পরিবারের কেউ অন্যভাবে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তাকে ডাক্তার পেতে, অ্যাম্বুলেন্স, রক্ত বা প্লাজমা জোগাড় করতে সাহায্য করতে পার। 

এমনকি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সাধারণ ছুটি শুরুর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারাদেশেই অনেক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন কাজ করছে। এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। অথবা তোমরাও এলাকার বড়দের সহায়তা নিয়ে এমন কোনো সংগঠন তৈরি করে ফেলতে পারো। 

মোট কথা কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে না। মনে রাখবে, একাত্তরে আমাদের দাদা-নানারা এর থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি পারি দিয়ে শেষে আলোর মুখ দেখেছিলেন। তাই নিজেদের মনোবল দৃঢ় রাখবে, সেই সাথে বন্ধুদের মনোবলও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে। যে বদ্ধ পরিস্থিতিতে এখন তোমাদের কাটাতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে কেউ কাউকে কোনো কটূক্তি বা দুষ্টমি করেও মনে আঘাত দিও না। তোমার বন্ধুটি হয়তো তোমার সাথে শেয়ার করেনি তার পরিবার এই দুর্যোগে কেমন করে কাটাচ্ছে! 

তাই স্কুলের হোক, কোচিংয়ের হোক বা পাড়ার, সব বন্ধুদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া বা সেলফোনে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করো, সাধ্যমতো নিজে অথবা অন্যের মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। 

জীবনের সব ধরনের পরিস্থিতিকেই ইতিবাচকভাবে নিজে দেখো, বন্ধুদেরও দেখতে সাহায্য করো। তবেই দেখবে, গেল চার মাসের বন্দিত্বকে কঠোর মনে হবে না বরং আগামীর নতুন জীবনে চলার পাথেয় পাবে। এই হোক দুই হাজার বিশ সালের করোনাভাইরাসের কারণে চলমান নিউ-নরমাল জীবনের বন্ধুত্ব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //