সংগীতময় জীবন

প্রকৃতি ও মানব হৃদয়ের মধ্যে ঐক্যতান সৃষ্টি করে সংগীত। পাখির গান, মৃদু বাতাসের দোলা, টাপুর টুপুর বৃষ্টি , সাগরের তরঙ্গ, ঝর্নার বহতা সর্বত্রই যেন সংগীতের মূর্ছনা। এদিকে মানব মনের প্রকাশ হাসি কান্না, ক্ষোভ, প্রতিবাদের  ভাষাও সংগীত। তাই প্রাচীনকাল থেকেই মানব জীবন সংগীতময়। 

স্পর্শের মতোই শব্দের আছে এক অন্যবদ্য শক্তি। মনের বিশেষ ভাব প্রকাশের ছন্দময় শব্দ মালা, সুর, তালের ঐক্যতানে প্রকাশই সংগীত। প্রাচীনকালে শিকারের সাংকেতিক সুরেলা ধ্বনি, প্রকৃতি পূজা কিংবা মধ্যযুগের ধর্ম যাজক সেন্ট অগাস্টিনের কনফেশন জুড়ে আছে প্রার্থনা স্বরূপ সংগীত। 

চার্চ, কিয়াংয়ের ঘণ্টাধ্বনি, আযানের সুমধুর সুরে আহবান। গজল, কীর্ত্তন, গীর্জার প্রার্থনা সংগীত যেন মানব মনে নাড়া দেয় সৃষ্টিকর্তার বন্দনার। অস্থির মনকে শান্ত করে সংগীত। তাই প্রত্যেক মানুষই নিজের অজান্তে হলেও গেয়ে উঠে গান। 

আজ বিশ্ব সংগীত দিবস । তরুণ সংগীত শিল্পীদের অনুপ্রেরণা যোগাতে প্রতিবছর ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবস পালিত হয় ১২০টিরও বেশি দেশে। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাংয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সংগীত উৎসব। পরবর্তীতে এ উৎসবই বিভিন্ন দেশে তাদের নিজ সংস্কৃতি হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব সংগীত দিবস হিসেবে। পপ, ব্যান্ড হোক আর ফোক প্রেমে বিরহে এমন কি আন্দোলনেও রয়েছে সংগীত। 

সংগীত এমন এক শিল্প মাধ্যম যাকে বাদ দিয়ে জীবনকে চিন্তা করা যায় না, মানুষ আত্মরক্ষার অস্ত্রও যেমন তৈরি করেছে তেমনি যুদ্ধে রণসংগীতও বেজেছে। দেশের গানের প্রেষণায় দেশের জন্যে লড়াই করেছে যোদ্ধারা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল মুক্তির গান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। প্রতিটি দেশের রয়েছে জাতীয় সংগীত যা মানব মনকে দেশপ্রেমে ব্রতী করে। 

লেখিকা: ইয়ারা যোহারীন

সংগীত চর্চার সবার জন্য এর বিশেষ কোনো শ্রেণীবিভাজন নেই। অভিজাত গিটার ,পিয়ানো কিংবা গ্রামের বাঁশের বাঁশি, উপজাতিদের লাউ বা গাছের খোলের তৈরি বাদ্যযন্ত্র এমনকি তালপাতার বাঁশির সুরও ছন্দ এনেছে জীবনে। 

ওস্তাদ তানসেন তার সংগীত প্রার্থনায় পাখোয়াজের তানে বৃষ্টি নামিয়েছেন আকাশ থেকে। আজও বাংলার গ্রামের শিশুরা ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে গেয়ে’ বৃষ্টি বন্দনা করে ফসলের আশায়। সভ্যতার শুরু থেকে অভিজাত পরিবারে সংগীতচর্চার রীতি লক্ষণীয়। রাজকীয় সংগীত বিনোদন তো ছিলই, ভারতের কলকাতার ঘরে ঘরে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা রীতির মতোই যেন আবশ্যিক। কৃষ্ণের বাঁশির সুরে মোহিত করে ভক্তবৃন্দকে তেমনি সংগীতের দেবী সরস্বতীর বন্দনায় মাতে সংগীতের শিক্ষার্থী। দার্শনিক প্লেটো তার ‘দি রিপাবলিক’ গ্রন্থে  শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সংগীত চর্চার উপর গুরুত্বারোপ করেন। 

সংগীত সম্পর্কে প্লেটোর উক্তি, ‘Music gives a soul to the universe, wings to the mind, flight to the imagination & life to everything.’

প্লেটোর এ উক্তি থেকেই উপলব্ধি করা যায় মানবজীবনে সংগীতের গভীরতা। সংগীতের আছে এক যাদুকরী শক্তি, মনকে চাঙ্গা করার মোহনীয় গুণাবলি। আধুনিককালে সংগীত ব্যবহৃত হচ্ছে টনিক হিসেবে। মনের সাথে সংযোগ ঘটিয়ে মানুষ নিচ্ছে সংগীতের থেরাপী।

মেডিটেশন, রিলাক্সিন, কনসেন্ট্রেশন, স্লিপিং, হ্যাপি সব রকম মিউজিকই আমরা খুব সহজে ইউটিউবে ছেড়ে মনের ওষুধ হিসেবে কাজে লাগাই। তাৎক্ষণিক ফলও পাওয়া যায়। তাই বইয়ের পাশাপাশি আমাদের বড় বন্ধু সংগীত। সংগীতকে যত আপন করে নেবেন আপনার জীবন তত সহজ হবে। 

স্ট্রেস ফ্রি প্রাণবন্ত হোক জীবনে সংগীতের পরশে। Live, Love and Dip yourself in Music.

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //