নতুন বছরেও অপ্রতিরোধ্য থাকবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে শেষ হলো ২০১৯ সাল, পেরিয়ে গেলো আরো একটি বছর। বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নে যেমন যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা, পাশাপাশি বিশ্বমঞ্চে সেরাদের কাতারে নিজেকে আরো উজ্জ্বল করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের এমন গতির সঙ্গেও সন্তুষ্টির সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের সামনে রয়েছে নতুন সময়, নতুন চ্যালেঞ্জ আর নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়না৷

বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের পরিচয় আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ। পৃথিবীর যেই প্রান্তেই যাই এই পরিচয় আমাদের গর্বিত করে, সম্মানিত করে৷ জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সম্মানের পরিধি আরো বাড়িয়েছেন তার কর্মগুণে। প্রতি বছর নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার এমন অনন্য ধারাবাহিকতা বিশ্বজুড়ে খুব কম নেতার মধ্যেই দেখতে পাই। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সাময়িকী ফোর্বসের প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় এবছর তার অবস্থান ২৯ তম। এই বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করেছে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া আন্তর্জাতিক পদকের সংখ্যা ৩৭-এ উন্নীত হয়েছে।

দল ও দেশের মানুষের নিরংকুশ  আস্থা নিয়ে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী ও টানা নবমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তিনি। এতো কিছুর পরেও তার সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের মানুষের ভালোবাসা। দিনশেষে তিনি তো বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমাদের আশার বাতিঘর। বাংলার মানুষের ভালোবাসাই তার শ্রেষ্ঠ অর্জন বলেই তিনি গণ্য করেন।

ভিশন ২০২১ কে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এখন আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০৯ ডলার,সেই সঙ্গে  বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। রাজধানীবাসীর কষ্ট লাঘবের জন্য এগিয়ে চলেছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কি.মি. মেট্রোরেলের কাজ। আমাদের সক্ষমতার প্রতীক,বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতুর কাজ ৮৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবছরেই এবং আগামী বছরের মধ্যে তা শেষ হবে আশা করা হচ্ছে।

২০১৯ সালে এসে দেশে অতিদারিদ্রের হার কমেছে ১১.৩ শতাংশ  এবং দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। একটি দেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন শিক্ষা তথা শিক্ষিত জনবল। এই লক্ষ্য পূরণে যথাযথ উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১৮.৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিনামূল্যে  বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২৯৬ কোটি পাঠ্যবই। এর পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরই সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে দশটি মেগা প্রকল্প। এরমধ্যে আলাদা মহিমা নিয়ে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন,তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। ২০২৩ সাল থেকে এই কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদুৎ সরবরাহ শুরু হবে। এছাড়াও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রাবন্দরের কাজ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে৷

কৃষিক্ষেত্রেও বর্তমান সরকারের ভূমিকা অনন্য। ২০১৯ সালে দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি মেট্রিক টন। সরকারের কৃষিবান্ধব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে মাছ উৎপাদনে ৩য়, ধান উৎপাদনে ৪র্থ এবং ইলিশ উৎপাদনে ১ম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। গত ১০ বছরে এই সরকারের অধীনে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

স্বাস্থ্যসেবা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায়ও সরকারের সাফল্য চিত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে হাসপাতালের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে, এছাড়াও বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে প্রায় ৩০টির বেশি ওষুধ। বিদ্যুতের  চাহিদা পূরণে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ২০১৯ এ এসে আজ আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২৫৬২ মেগাওয়াট  এবং বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৯৪ শতাংশ জনগণ।

অর্থনৈতিক খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে৷ এবছরে আমাদের রপ্তানী আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,জিডিপি প্রবৃদ্ধির এখন ৮.১৫ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স বাবদ আয় ১৬০০ কোটি মার্কিন ডলার আর ব্যাংকে রিজার্ভ বৈদেশিক মুদ্রা পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৩৬০ কোটি ডলার, এই ধারা আরও গতিশীল করতে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মানাধীন যেখানে সৃষ্টি হবে  ১ কোটি লোকের নতুন কর্মসংস্থান।

বিদায়ী বছর আমাদের সাফল্যের আরেকটি অধ্যায়। এই সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে নতুন বছরে সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আরও ভালোভাবে কাজ করবে। নতুন বছর আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

২০২০ সালে পূর্ণ হবে ইতিহাসের মহান নেতা  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং ২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত পালিত হবে মুজিব বর্ষ। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যৌথভাবে উদ্‌যাপন করবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো এবং বাংলাদেশ। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর নামে আগামী বছর থেকে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে ইউনেসকো। গবেষণা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশে তরুণদের উৎসাহিত করতে দেয়া হবে এ পুরস্কার।

সর্বোপরি,আমাদের বিদায়ী বছরের সীমাবদ্ধতা ঘোচানোর তাগিদ নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করে যেতে হবে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে যার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, যে স্বপ্নের সারথি হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব বর্ষ যেনো বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যমণ্ডিত অধ্যায় হয়ে ইতিহাসের পাতাকে আলোকিত করে রাখে সেই  আশাই থাকবে।

সকলের জন্য নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //