করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা

রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে

করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্ব এক চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। আমাদের দেশে করোনা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা মোটেও যথেষ্ট নয়। বরং করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক স্তর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট, আইসিইউর যন্ত্রপাতি এবং সামগ্রিকভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকারি পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। যে কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, এমন রোগীদেরও হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে সাধারণ সর্দি-জ্বর ও কাশির চিকিৎসায়। করোনার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় এবং অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই ব্যবস্থা না থাকায় তারা এ ধরনের রোগীকে গ্রহণই করছে না। সম্প্রতি এরকমই একটি ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের শিকার একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চার চারটি হাসপাতালে নিয়েও ভর্তি করানো যায়নি এবং পরে একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

এই মৃত্যু আমাদের সাম্প্রতিক চিকিৎসা ব্যবস্থার এক ভয়াবহ দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিদিন যেসব সাধারণ রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছে, তাদের চিকিৎসার বিষয়টিকে কোনোভাবেই হেলাফেলার সুযোগ নেই। এমনকি করোনাভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ থাকলেও রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা মেনে নেয়া যায় কি? 

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের রাজধানীর বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে; কিন্তু সেখানেও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের বেশিরভাগ ডাক্তার ও নার্স রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি অন্যান্য নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। যদি তাদের নিরাপত্তাজনিত ঘাটতি থাকে তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই রোগীদের সুচিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা কিংবা উদাসীনতা প্রদর্শন করা ঠিক হবে না। 

আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর জন্য এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি এবং নির্দেশনা মানতে বাধ্য করতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে সমন্বিতভাবে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //