প্রবাসী আয় বাড়ছে সঙ্গে কাজ হারানোর শঙ্কাও

বাংলাদেশের জিডিপির মোট ৭ শতাংশ আসে প্রবাসী আয় থেকে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। বেসরকারি ঋণ সংস্থান ও পোর্টফোলিও ইক্যুইটি প্রবাহের চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিশীল। 

প্রবাসীরা ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। এই আয়ের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারে।

এ আয় বৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় গবেষণা সংস্থাগুলোর পূর্বানুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা আভাস দিয়েছিল, মহামারির কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে; কিন্তু সব হিসাব পাল্টে দিয়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। কেবলমাত্র জুন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৮৩ কোটি ডলার, যা এক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় পাঠানোর সর্বোচ্চ রেকর্ড।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি একদিকে দেশের অর্থনীতিতে আশার সঞ্চার করেছে অনেকাংশে। অন্যদিকে আবার এ আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। এ আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, প্রণোদনা দেয়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আয় আসা বেড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের ভিন্ন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। করোনার কারণে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা জমানো টাকা পাঠিয়েছেন। অনেক দেশে আবার টাকা পাঠানোর সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে আগামী কয়েক মাস প্রবাসী আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে প্রায় দুই লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসতে পারে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। যদিও প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ হারানো, বেতন কমার মতো নানা সংকটের আশঙ্কায় রয়েছেন। 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে একটি। ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়েছেন। তারা প্রায় দুই লাখ ১৭ হাজার মিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। 

করোনার কারণে সারাবিশ্বে পুরো অভিবাসন খাতটা সংকটে পড়েছে। তবে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব ও অবদানের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের অভিবাসনের বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে এ মুহূর্তেই আলোচনা শুরু করতে হবে। 

এর মধ্যে যারা দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের কোনো কাজ নেই, আয়ের উৎস নেই। এ প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এখন তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সরকারের। সহজ শর্তে উদ্যোক্তা ঋণ প্রদানসহ তাদের জন্য কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //