বাংলাদেশ দুর্নীতির জন্য বিশ্বের কাছে মডেল : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের নেতা মন্ত্রীরা দাবি করে বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ নাকি রোল মডেল। কিসের জন্য বাংলাদেশ মডেল? স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির জন্য সারা বিশ্বের কাছে মডেল। কারণ এরা যেমন ‘স্বর্ণের মেডেল’ থেকে স্বর্ণ চুরি করে আবার করোনায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণের চাল চুরি ও নকল মাস্কের ব্যবসা করতেও রোল ‘মডেল’ হয়েছে। 

তিনি বলেন, মরণঘাতী করোনাভাইরাস পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি আরোপ করার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর। এমনিতেই অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে। মানুষের ঘরে খাবার নেই। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অসহায়ভাবে পথে-ঘাটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষাও হচ্ছে নামমাত্র। এরমধ্যে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

শনিবার (৪ জুলাই) সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, মহামারির চিকিৎসা কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয় না। করোনা মহামারির চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বের কোথাও সরকারিভাবে কভিড টেস্টে অর্থ নেয়া হয় না। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কভিড টেস্টের রেকর্ড দক্ষিণ কোরিয়ার। তারা দিনে এক লাখের উপর মানুষের কভিড টেস্টও করেছে। এমনকি এন্টিবডি টেস্টও করেছে। তাদের সমস্ত টেস্টই বিনামূল্যে করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরিব দেশ আফগানিস্তানে কভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্বের গরিব দেশ পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো কভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়। আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশেই টেস্ট করাতে ফি নেয় না। উপরন্তু প্রায় প্রতিটা দেশের সরকার স্বেচ্ছাসেবীদের ঘরে ঘরে পাঠাচ্ছে নমুনা সংগ্রহে। টেস্ট করাতে জনগণকে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এই মহামারিকেও বানিয়েছে মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ। এরা কতটা অমানবিক তার নিকৃষ্টতম প্রমাণ এই ফি ধার্য।

তিনি বলেন, যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং সব বিশেষজ্ঞ করোনা সংক্রমণ রোধে টেস্ট বৃদ্ধি করাকেই প্রধান অবলম্বন বলছেন, সেখানে টেস্ট করাতে ফি ধার্য করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা উপসর্গ থাকার পরও করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন না। তাদের চিহ্নিত করে আইসোলেশন করা যাবে না। এতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকবে। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘতর হবে। দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত বন্ধ, মানুষের আয়ের উৎস থেমে গেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এমনিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকার নির্ধারিত সাড়ে তিন হাজার টাকায় কভিড টেস্ট করছে না। যে যার মতো ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই করছে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমস্ত মনোযোগ দুর্নীতি আর লুটপাটে। একটি হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের খাবার-দাবারের বিল ২০ কোটি টাকা দেখালেও অভিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন কোনো দুর্নীতি হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে এই ২০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা এখনো শোনা যায়নি। সরকার চারিদিক থেকেই শুধু স্বল্প আয়ের মানুষেরই পকেটে হাত দিচ্ছে। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ, এর ওপর বিদ্যুৎ জ্বালানি, গ্যাস ও পানির মূল্য বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা, এর সাথে করোনা টেস্টের ফি ২০০ টাকা ধার্য করে সরকার এখন ভ্যাম্পেয়ারের ন্যায় রক্তচোষার ভূমিকায়।

কোনো নাগরিক যদি টাকার অভাবে করোনাভাইরাস টেস্ট করতে না পেরে নিজ দেহে করোনাভাইরাস বহন করে বেড়ায় তাহলে একজন নাগরিক শুধু নিজেরই ক্ষতি করছেন না তিনি অন্যের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। এ কারণেই বিষয়টি নাগরিকদের দায়-দায়িত্বের উপর ছেড়ে না দিয়ে বরং এটি রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব, জনস্বার্থে রাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে নাগরিকদের বিনামূল্যে করোনাভাইরাস টেস্ট করানোর সুযোগ সহজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই সরকার নিজেরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। বিরোধী দল কিংবা বিশেষজ্ঞদের মতামতকেও তোয়াক্কা করছে না। জনগণের দল বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা করোনা পেন্ডামিক ইস্যুতে সরকারকে বরাবরই সহযোগিতা করতে চেয়েছি। সঠিক পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার সেগুলো কানে নেয়নি। দেশে করোনাভাইরাস টেস্টের সক্ষমতা বাড়ানোর আহবান জানিয়ে গত ২২ মে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন, প্রতিটি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত বিশ্বস্বীকৃত কোনো মেডিসিন আবিষ্কার হয়নি। এই অবস্থায় সবদেশই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রতিদিন বেশি সংখ্যক মানুষকে টেস্টের আওতায় এনে করোনা উপসর্গ থাকলে আগেভাগেই আইসোলেশনে নেয়া কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণকেই অন্যতম সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে ঠিক উল্টো চিত্র। মানুষ নিজ উদ্যোগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা এবং করোনা চিকিৎসা করাতে গিয়েও নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

রিজভী বলেন, আজকে স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে সরকার করোনার ব্যাপারে, টেস্টের ব্যাপারে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কোনো উপায়ে টাকা আয় করে দলীয় নেতাকর্মীদের লুটপাটের সুযোগ এবং বিদেশে পাচার করে দেয়াই যেন এই সরকারের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষকে গুম-খুন-হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে এই সরকার নিজেরাই নিজেদের মেয়াদ বাড়িয়ে সময় পার করছে বটে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই সরকারের অদক্ষতা, অজ্ঞতা, অব্যবস্থাপনার খেসারত নাগরিকদের হয়তো জীবনের বিনিময়ে দিতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্য ফি বাতিল করে বিনামূল্যে নাগরিকদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাই। অবিলম্বে সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এককভাবে না পারলে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিন। জনগণের জীবন নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //