মিতা কলমদার
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম
ফাইল ছবি
সারা দেশের পাবলিক, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নামের ‘যুদ্ধ’ শুরু হবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলোতে।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল- এ বছর বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের মূল্য বেশ বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষার নিয়মাবলি মেনে শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন দুটি থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারে। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট মোট ১০টি এবং এর মধ্যে ৫টিতে ভর্তি ফরমের মূল্য ৬০০ টাকা; বাকি ৫টিতে ৪০০ টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিট ৩টি এবং প্রতিটির আবেদন ফি প্রায় ২ হাজার টাকা।
ভর্তি পরীক্ষা এখন এমন একটা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, একটি বা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে নিশ্চিত থাকা যায় না, সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা! এক্ষেত্রে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে অনলাইনে নিজে নিজে অ্যাপ্লিকেশন করার মতো ব্যবস্থা বা অবস্থা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই নেই বা থাকে না। এজন্য স্থান বিশেষে প্রতি ইউনিটে আবেদন করার জন্য কম্পিউটারের বাণিজ্যিক দোকানগুলোয় দিতে হয় সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
ছোট্ট পরিসরে আমরা যদি একটা হিসাব করে ফেলি, তাহলে দেখব- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু কোনো শিক্ষার্থী যদি অন্যূন ৪-৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১০-১২টি ইউনিটে পরীক্ষা দিতে চায়, তাহলে আবেদন ফি, দোকানের খরচ ও যাতায়াত সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।
এতে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের কোনো সন্তান যদি সর্বোচ্চ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী থাকে, তাহলে তার পরিবারের জন্য এ পরিমাণ অর্থ জোগাড় করা কতখানি কষ্টের।
কৃষিভিত্তিক এই দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে যারা স্বপ্ন বুনছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, তাদের অধিকাংশই কৃষক বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের জন্য এ ব্যয়ভার বহন করা কি সম্ভব?
এভাবে কতজনের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে, তার খবর কে রাখে! দেশের দরিদ্র ও মেধাবী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ভর্তি ফরমের মূল্য কমানো হবে, এটাই প্রত্যাশা।
মিতা কলমদার
লোক প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।