কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের খুটিনাটি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:১২ পিএম

ছবি: মেডিকেল নিউজ টুডে।

ছবি: মেডিকেল নিউজ টুডে।

চশমার বিকল্প হিসেবে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা আজকাল ফ্যাশন। যাদের চোখে সমস্যা রয়েছে তারা ছাড়াও বর্তমানে যেকেউ ফ্যাশনের অংশ হিসেবে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে।  

ব্যবহার 

১. দুই চোখের পাওয়ারের তারতম্য অনেক বেশি থাকলে চশমা দিয়ে দুই চোখে একসাথে দেখা যায় না। সে ক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স আদর্শ হতে পারে।

২. যেসব রোগীর এক চোখে ছানি অপারেশন করা হয়েছে কিন্তু অন্য চোখ স্বাভাবিক, তাদের ছানি অপারেশন-পরবর্তী চশমা দিলে যেকোনো জিনিস দু’টি দেখেন। এ সমস্যা দূরীকরণে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া শিশুদের আঘাতজনিত ছানি অপারেশনের পর কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়।

৩. অধিক প্লাস পাওয়ার (আগের দিনে ছানি অপারেশনের পর ব্যবহৃত হতো) বা অধিক মাইনাস পাওয়ার থাকলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়।

৪. চোখের নিজস্ব কিছু অসুখে চিকিৎসকের কন্টাক্ট লেন্সের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।  এ ছাড়া এক চোখ অন্ধ হলে তা ঢাকতেও ব্যবহার করা যায়। 

৫.ফ্যাশনের জগতে কন্টাক্ট লেন্স আজ বহুল ব্যবহৃত। গাড়ি চালাতে, ভিড়ে চলাফেরা করতে, খেলাধুলায়, শোবিজে মাইক্রোস্কোপ, ক্যামেরা নিয়ে কাজকর্মের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করা হয়। 

ধরন 

হার্ড, সেমি সফট, সফট ও ডিসপোজ্যাবল এই চার ধরনের লেন্সই মূলত ব্যবহৃত হয়। 

হার্ড লেন্স

হার্ড লেন্স এক ধরনের স্বচ্ছ প্লাস্টিক। এর মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যায়। তবে হার্ড লেন্সের মাপজোক অত্যন্ত সূক্ষ্ম হতে হয়। নতুবা সেট করা বেশ কষ্টসাধ্য। আর এই লেন্সের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন আসতে পারে না। সে জন্য চার ঘণ্টা পরপর খুলে ধুয়ে আবার পরতে হয়। আমাদের কর্নিয়া বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সুস্থ থাকে। হার্ড লেন্স তাতে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। টেকে বেশি, দামে কম এবং অনেক পরিষ্কার। 

সেমি সফট

সেমি সফট লেন্স বা আরজিপি লেন্স অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। তাই কর্নিয়ার সুস্থতায় কোনো অসুবিধা হয় না। 

সফট লেন্স

সফট লেন্সও মূলত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। কিন্তু এর জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বেশ নরম হয়। তাই বেশ আরামদায়ক। লেন্সটি হার্ড লেন্সের তুলনায় আকারেও বড়। তাই সহজে খুলে পড়ে যায় না। কিন্তু খুব নরম হওয়ায় সহজে ছিঁড়ে বা ভেঙে যেতে পারে। তাই অত্যন্ত যত্নসহকারে ব্যবহার করতে হয়। 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, নতুবা ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দাম বেশি, টেকে কম, খোলার পরপর সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হয়। 

সিগারেটের ধোঁয়াসহ যেকোনো ধোঁয়া ও ধুলায় এই লেন্স অসুবিধার সৃষ্টি করে। ভালোভাবে ব্যবহার করলে বছর খানেক চলে। বিভিন্ন কালারের পাওয়া যায়।

ডিসপোজ্যাবল লেন্স 

আধুনিক যুগে এটি বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি এক ধরনের সফট লেন্স। তবে চলে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস। 

যাদের জন্য প্রযোজ্য নয়

১. চোখের অ্যালার্জি থাকলে ব্যবহার করা উচিত নয়।

২. বেশি ধুলা ও ময়লার মধ্যে যাদের কাজ করতে হয়, তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। 

৩.  চোখের যত্ন সম্বন্ধে উদাসীন ব্যক্তিদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়.

৪.  যাদের চোখ বারবার লাল হয় বা পানি পড়ে তারা লেন্স ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। 

৫. যাদের চোখে মিউকাসের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। 

৬. ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়। 

ঝুঁকি 

শখ করে অনেকেই কন্টাক্ট লেন্স পরে থাকেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না এর ঝুঁকি সম্পর্কে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কন্টাক্ট লেন্সের সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে হয় ব্যবহারকারীদের।

কন্টাক্ট লেন্সের কারণে চোখে সংক্রমণ হয়। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর জন্য এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে শতকরা ৪৫ ভাগ ব্যবহারকারী লেন্স খোলা ও পরার আগে হাত ধুয়ে নেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমাতে যাওয়ার কারণে চোখে সংক্রমণ হয়ে থাকে। এতে কর্ণিয়ার সংক্রমণ ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। রাতে কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে চোখের পাতা বন্ধ থাকায় অক্সিজেন সংকটে পড়ে। এতে চোখ জীবাণু মোকাবেলায় দুর্বল হয়ে পড়ে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh