অর্থ পাচার
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৫২ পিএম
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা পাচারের তথ্য দিয়েছে বিশ্বের খ্যাতনামা সংস্থাগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দশ বছরে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে কারসাজির মাধ্যমে এর বড় একটি অংশ পাচার হয়েছে। পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি করার সময় কাগজপত্রে দাম কম দেখিয়ে টাকা পাচার হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি বলেই অর্থ পাচারের মত ঘটনা ঘটেছে।
দীর্ঘদিন থেকে ঋণগৃহীতা ও ঋণখেলাপিরাই মূলত ব্যাংক চালাচ্ছে। কিছু প্রভাবশালী পরিচালক শুধু নিজেদের টাকা পাচার করেই ক্ষান্ত হননি, কমিশন নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অন্যদের টাকাও নির্বিঘ্নে পাচার করেছেন ভুয়া এলসির মাধ্যমে। এলসি ওপেনিং থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়। গত ১০ বছরে ব্যাংকের বড় অঙ্কের এলসি এবং খেলাপি হয়ে যাওয়া বড় ঋণগুলো তদন্ত করলে ব্যাংক খাতের এই রাঘব-বোয়ালদের মুখোশ খুলে যাবে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আর্থিক কার্যক্রমে প্রচুর অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডি, পরিচালক বা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো শাস্তির তথ্য পাওয়া যায় না। বরং কিছু দিক নির্দেশনাসহ ‘কঠোরভাবে’ সতর্ক করে দিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর তার দায়িত্ব শেষ করে। তাই ব্যাংকিং সেক্টরের এই রাঘব-বোয়ালদের ধরতে ক্যাসিনো অভিযানের মতো এই খাতেও বড় অভিযান চালাতে হবে। এই খাতের প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে না পারলে ব্যাংকিং খাত উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। গত ১০ বছরে যেসব ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের এলসি খোলা হয়েছে, সেসব ব্যাংকে হানা দিয়ে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। এরপর প্রাপ্ত এলসি ডকুমেন্টের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে থাকা তথ্য যাচাই করতে হবে। সার্ভারে এলসি এন্ট্রির তথ্য থাকলে পণ্য এসেছে কি-না, সে বিষয়টি যাচাই করতে হবে। মূলত এ বিষয়গুলো তদন্ত করলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। এরপর সরকারকেই টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদকীয়,
সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল, ৩১ অক্টোবর।