নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১৭ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে অনেক ব্যাংক ইতোমধ্যে ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনলেও কেউ কেউ সেটা বাস্তবায়ন করেনি।
তিনি বলেন, এখনো যারা এই সিদ্ধান্ত মানেননি, তাদের বলবো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে কেউ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, ‘যেভাবেই হোক খেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আর এজন্যই কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে।’
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাশেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে আনার জন্য ব্যাংকগুলো যেসব শর্ত দিয়েছিল, সরকার সেসব শর্ত পূরণ করেছে। কিন্তু কেউ কেউ সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে সুদহার এক অংকের ঘরে এখনো আনেননি। যারা সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং আইনে সংস্কার এনে মার্জার ও একুইজিশনের মতো বিষয়গুলো কার্যকর করা হবে।’
তিনি বলেন, ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে আমরা একটি একক রেট করতে চাই। সেটা অব্যশই ১০ শতাংশের ওপরে যাবে না। ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কাছাকাছি যেতে পারে। এটা একটি বড় কর্মযজ্ঞ। সবাই মিলে করতে হবে, এখানে বড় বিষয় হলো- কোনো পক্ষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য সরকার মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
তিনি বলেন, দেশের শিল্পায়নের স্বার্থে আমরা আর্থিকখাতে সংস্কার কর্মসূচি জোরদার করতে চাই। ব্যাংকিং, পুঁজিবাজার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া আর্থিক খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে জেলে পাঠিয়ে বা অপমান করে টাকা আদায় করতে চাই না। তারা যাতে টাকা দিতে পারে, এজন্য তাদেরকে আমরা সময় দিতে চাই। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সকলকে টাকা দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবই। এটা রাষ্ট্রের সকল মানুষের টাকা।
উল্লেখ্য, গত রবিবার হাইকোর্ট দুই শতাংশ আগাম পরিশোধ সাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের জন্য ওই বিশেষ সুবিধার মেয়াদ আরো ৯০ দিন বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাঁচটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রথম লটে পঁচিশ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে চুক্তিবদ্ধ দুই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া নিরবিচ্ছন্নভাবে আমদানির লক্ষ্যে লটভিত্তিক মূল্য ৫০ কোটি টাকার উর্ধ্বে গেলেও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আলাদা আলাদা অনুমোদনের পরিবর্তে বিশেষ বিবেচনায় এ বছরের অন্য সব লটের অনুমোদনের ক্ষমতা শিল্পমন্ত্রীকে প্রদান।
প্রস্তাবের অর্থের পরিমাণ ৫৪ কোটি ২৯ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৭ টাকা।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির সাব-কম্পোনেন্ট ১.৫ এর অন্তর্ভূক্ত ‘সিস্টেমেটিক ইংলিশ টিচিং ফর প্রাইমারি টিচারস্’ এর আওতায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে ট্রেনিং অব দ্য মাস্টার ট্রেনারস্ ইন ইংলিশের (টিএমটিই) সেবা ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি। এর আওতায় সারা দেশে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দুইজন করে মোট এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে ইংরেজি শিক্ষাদানে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘খুলনা জেলার ভুতিয়ার বিল ও বর্ণাল সলিমপুর কোলাবাসুখালী বণ্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) বাস্তবায়নাধীন ১৮ নদীর ৪৯ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার পুনঃখনন ও ৮ ভেন্টের একটি ড্রেনেজ রেগুলেটর নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন। এতে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
এছাড়া অনুমোদিত অন্য দুই ক্রয় প্রস্তাব হলো- ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে ক্রয় প্রস্তাব। এতে ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।