ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৪ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:৪৩ পিএম
ছবি: ডয়চে ভেলে
বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার কারণে ভারতে প্রতি মারা যাচ্ছে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের হেলফ অ্যাফেক্ট ইনস্টিটিউট এ তথ্য জানিয়েছে।
সারা বিশ্বের বাতাসের মান পরীক্ষা করে ওই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রতি বছর বায়ু দূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ, বায়ু দূষণ বিশ্বের ৯.৮৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। দু’দেশেই বছরে ১২ লাখ করে লোক বায়ু দূষণের কারণে অকালে মারা যাচ্ছে।
বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে শিশুদের দেহে। ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এমস) চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সালে বছরে ভারতে প্রায় এক কোটি ৯৫ লাখ শিশুর মৃত্যুর পিছনে কারণ ছিল বায়ু দূষণ। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি দিন প্রায় ৫৩৫ জন শিশুর জীবন কেড়ে নিচ্ছে দূষিত বাতাস।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত তিন দশকে বায়ু দূষণের কারণে এক কোটির বেশি শিশু পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গেছে।
শিশু দেহে বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমসের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ রণদীপ গুলেরিয়া। তার মতে, দীর্ঘ সময় দূষিত বায়ুতে থাকলে শিশু দেহে মারাত্মক প্রভাব হয়। এ ধরনের শিশুদের বয়সের তুলনায় ফুসফুস সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না। একটু বড় হলে এদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেকাটাই বেড়ে যায়। যাদের জন্মগত হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের চিত্রটি আরো খারাপ।
চিকিৎসকদের মতে, ধূমপানে কোনো ব্যক্তির ফুসফুসে যতটা ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের ফুসফুসের অবস্থাও প্রায় ততটাই খারাপ।
চিকিৎসকদের কাছে মূল উদ্বেগের বিষয় হল দিল্লির বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কণার উপস্থিতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারতের প্রায় ৯৮ শতাংশ শিশুই কোনোভাবে ক্ষতিকর কণার শিকার। মূলত ক্ষেতের আগাছা পোড়ানো ধোঁয়া দিল্লির বায়ু দূষণের মূল কারণ হওয়ায় বাতাসে ক্ষতিকর ভাসমান পিএম২ ও পিএম১০ কণার উপস্থিতি স্বাভাবিকের কয়েক গুণ বেশি থাকে; যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে সোজা ফুসফুস ও রক্তে মিশে যায়। রক্তে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতির ফলে অনেক সময়ে ধমনী ফুলে যায়। বাধা পায় রক্তপ্রবাহ। যার ফলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এমসের একটি সূত্রের দাবি, ফি বছর বায়ু দূষণের শিকার হওয়ায় ৮০ শতাংশ দিল্লিবাসীর ফুসফুসের অবস্থা দেশের অন্য প্রান্তের মানুষের চেয়ে খারাপ। প্রতি বছর শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছরে এমসে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি রোগী শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি হয়েছেন।
দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট (টেরি) সংস্থার গবেষক অরিন্দম দত্তের মতে, শুধু দিল্লি নয়, বায়ু দূষণের শিকার রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়াও কানপুর ও বারাণসী-গাঙ্গেয় অববাহিকার বাসিন্দারা। ভারতের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ থাকেন এখানে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গত দু’দশকে অববাহিকায় বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমেছে অন্তত সাত বছর। -আনন্দবাজার পত্রিকা