নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৩ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:০৪ পিএম
উত্তাল সাগর। ছবিঃ সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাগেরহাটের দুবলার চরে হতে যাওয়া রাসমেলা বাতিল ঘোষণা করা
হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকাল থেকে রাসমেলার দর্শনার্থীদের যাত্রা শুরুর সময়
নির্ধারিত ছিল। এদিন দুপুর নাগাদ মেলায় যাওয়ার অনুমতি বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত
আসার কথা ছিল। তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর)
দুপুরেই উদযাপন কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে রাসমেলা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে
বনবিভাগ। রাসমেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু শন্তুও এই তথ্য নিশ্চিত
করেছেন। একইসঙ্গে ‘বুলবুলের’ কারণে সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশও বন্ধ ঘোষণা করা
হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের
বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান ও পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল
মামুন জানান, দুবলার চরে রাসমেলার স্থানটি বাগেরহাট জেলা
প্রশাসনের আওতায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি, আঘাত হানার সম্ভাব্য
সময় এবং দুর্যোগের সার্বিক প্রভাব বিবেচনা করে রাসমেলা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছে।
রাসমেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ
সম্পাদক প্রদীপ বসু শন্তু জানান, পূর্ণিমার দিন শুধু পূজা অনুষ্ঠিত
হবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে শুক্রবার সকালে
বাগেরহাট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
কমিটির সভা থেকে সুন্দরবন বিভাগকে সব ধরনের পাস-পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনও পাস-পারমিট দেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত
করা হয়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার বেলা ১২টা
নাগাদ মোংলা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত অব্যাহত রাখা
হচ্ছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত মোংলা থেকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ৫৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান
করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে
বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে শুক্রবার সকাল ৯টার পর
থেকে খুলনার আকাশে মেঘমালা দেখা যায়। শুক্রবার সন্ধ্যা বা শনিবার সকাল থেকে খুলনার
মানুষ এর তীব্রতা উপলব্ধি করতে পারবেন। যা শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ অঞ্চল দিয়ে বয়ে
যেতে পারে।’
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ
ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত
বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পরিস্থিতি
মোকাবিলায় শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা করে জেলার সব সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে মোংলা বন্দরে তিনটি কন্ট্রোল রুম
চালু করেছে কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর
রশিদ জানিয়েছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা
হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ঘনীভূত হওয়ার ফলে দুবলার আয়োজক জেলেদের পরামর্শেই মেলা বন্ধ
ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর তাৎক্ষণিক
সাপোর্ট হিসেবে ১৯০ মেট্রিক টন খাবার ও নগদ দুই লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। আপদকালিন সহায়তা
আরও বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হবে।’
খুলনা জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, খুলনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের
সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসনের
সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, ‘ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অবস্থা প্রতিকূল হলে দুবলার চরে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।’