দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৫০ পিএম
আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নতুন নয়। কিন্তু গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে পেঁয়াজ। এরই মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো চাল, ভোজ্যতেল, সবজি এবং আদা-রসুনের দামও বেড়েই চলেছে। বাজারে নতুন চাল ওঠার এই সময়ে দাম কমার বদলে বরং কেজিপ্রতি ৬-৮ টাকা করে মূল্য বেড়ে গেছে। এখুনি সতর্ক না হলে পেঁয়াজের মতোই চালের মূল্যবৃদ্ধিও লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে। যেটা সামাল দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তাই উত্তর খোঁজা জরুরি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই দফায় দফায় দাম কেন বাড়ছে?
যেখানে দেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৬ লাখ টন, সেখানে গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত প্রায় ২৩ লাখ টন এবং আমদানি করা প্রায় ১১ লাখ টন হিসাবে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ ৩৪ লাখ টন। সে হিসাবে ৮ লাখ টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তারপরও মূল্য বৃদ্ধির এই রেকর্ড কেন? আসলে এজন্য দায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা, পরিকল্পনা ও তদারকির অভাব। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমদানিকারকরা কী মূল্যে বাজারে পণ্য সরবরাহ করছেন এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরাই বা কী মূল্যে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন এসব বিষয় কঠোরভাবে মনিটর করা দরকার। তবে শুধু দাম বাড়লেই নয়, বরং নিত্যপণ্যের বাজার সারাবছর মনিটর, নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মনিহারি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে এবং টিসিবিকে আরও সক্রিয় করে রাজধানীর বাইরে অন্যান্য জেলা শহরেও নিত্যপণ্য বিক্রি করতে হবে। তাতে ভোক্তাসাধারণের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে, যাতে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা কোনো রকম প্রশ্রয় না পায়। কনজিউমার ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত চার মাসে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট। তাই দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করে কালোবাজারি ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য ও সেবার দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ী সমাজ আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।
-সম্পাদকীয়, সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল