ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫০ পিএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১১:২১ এএম

পুরনো ছবি।

পুরনো ছবি।

শিশু ও নারী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এ ধরনের অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড নিরসনে প্রয়োজনে ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। 

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিরোধীদলের দুজন সিনিয়র সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্ন পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানান। এ সময় তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সরকারি দলের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদও। 

তাদের দাবি, ধর্ষকদের প্রয়োজনে বন্দুকযুদ্ধে দিলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের নিষ্ঠুর ও অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটাতে সাহস পাবে না।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর এ ইস্যুতে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। 

অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষণের পর যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে সেই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের পরও জনমনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। 

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পরপরই সাভারে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ধামরাইতে একই ঘটনা ঘটে। পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সাল ধর্ষণের মহাৎসব ঘটেছে। 

কেনো ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এ বিষয়ে সংসদে দুই ঘণ্টার জন্য সাধারণ আলোচনার সুযোগ দিতে স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ওই সময় এসিড নিক্ষেপ করে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যায়। তখন এরশাদ সাহেব এটা প্রতিরোধে এসিড মারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছিলেন। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এটা কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। তাই সময় এসেছে চিন্তা করার, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতো ঘটনা ঘটছে, মাদকের জন্য এতো ক্রসফায়ার হচ্ছে। সমানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু এই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ, এখন পর্যন্ত কেনো একজন ধর্ষক বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় না? বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে যদি ব্যবস্থা না নেয়া যায়, তবে কোনোক্রমেই এটা কন্ট্রোল করা যাবে না। 

একই দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষণের পরপর পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করলো। সেদিন যদি পুলিশ ওই পাঁচ ধর্ষককে মধুপুরে নিয়ে গুলি করে মারতো, তাহলে কিন্তু অন্য কেউ আবার ধর্ষিত হতো না। 

তিনি বলেন, একটার পর একটা ধর্ষণ হচ্ছে। মেয়েরা বাসে ওঠে, ওই বাসে আগে থেকেই ৪-৫ জন থাকে। নারীরা ওঠার পর দেখা যায় ওরা যাত্রী না, ওরা ধর্ষক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, সেখানে গুলি করে মারা হোক। 

তিনি বলেন, ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এনকাউন্টারে দিয়ে মেরে ফেলা। যাতে আর কোনো ধর্ষক যেনো সাহস না পায়। ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ওইখানে গুলি করে মেরে ফেলা হোক। 

কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর এমন দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেককে এভাবে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ভারতে একবার বাসে এক নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার  করা হয়। পরে ওই পাঁচ ধর্ষককে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে গেছে। কাজেই আমি অন্য দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে একমত। আমি যদি চিনি যে সে ধর্ষক, সেই এই জঘন্য কাজ করেছে- তার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh