সংসদে উত্তপ্ত বিতর্ক: বিএনপির এমপিদের ওয়াকআউট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৩ পিএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৬ এএম

আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারদলীয় ও বিএনপির এমপিদের মধ্যে জাতীয় সংসদে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। দুই পক্ষের বিতর্কের মধ্যেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে এ নিয়ে দীর্ঘ উত্তপ্ত বিতর্কের ঘটনা ঘটে। 

প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বিএনপির নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ প্রশ্ন রেখে বলেন, আদৌ কী ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দিতে পারবে? সরকার কী অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে? কিন্তু বাস্তবে দেখছি অতীতের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রচেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অংশগ্রহণ করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে দুই জন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। চট্টগ্রামের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। সেখানে নির্বাচনের নামে আগের রাতেই অনেক কিছু হয়েছে। তাই আমাদের আশঙ্কা, দুই সিটি নির্বাচনে কী জনগণ ভোট দিতে পারবে? আমাদের নির্বাচনী মিছিল থেকে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে বলা হচ্ছে পকেটমার, চাঁদাবাজ ইত্যাদি। এভাবে কতোদিন চলবে? সিটি নির্বাচন কী আদৌ সুষ্ঠু হবে? আমরা এ ব্যাপারে সরকারের তরফে স্পষ্ট বক্তব্যে চাই। 

জবাব দিতে গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি যতোক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনে না জিতবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচনের আগে মিথ্যাচার ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বিএনপির ট্রেডিশনে পরিণত হয়েছে। অথচ এখনই সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপির এমপি হারুন সাহেব স্বীকার করলেন, তার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আবার সিটি নির্বাচন না হওয়ার আগেই বলছেন উল্টো কথা। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচব হবে। 

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনের নামে প্রহসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে ভোট মাপার মেশিন রয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশী আসন পাবে না। কিন্তু ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিএনপিই মাত্র ২৯টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। খালেদা জিয়ার কাছে ভোট মাপার মেশিন রয়েছে। 

তিনি বলেন, গাজীপুর ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জিতেছিলো। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত এ দুটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়নি, ততোক্ষণ বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সরকার ভোট ডাকাতি করছে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, মিথ্যাচার ও মিথ্যা অভিযোগ করা বিএনপির একটি ট্রেডিশনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের বিধিতে রয়েছে- সুবিধাভোগী ও অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আমরা কী সুবিধাভোগী? আমি মন্ত্রী ছিলাম, এখন এমপি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ কী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন? এরশাদের আমলে মওদুদ সাহেব প্রধানমন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট, বিএনপির আমলে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। অথচ ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন, আমি এবং আমির হোসেন আমুরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষে উপলক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানায় আমরা যাবো, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলবো, ভোট চাইবো না। আর সমন্বয়ক বলে কোনো কিছু নেই। আমরা মুজিববর্ষের কর্মসূচিতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবো, প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবো না। 

এ বিষয়ে ফ্লোর নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির হোসেন আমু বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নেগেটিভ রাজনীতি করে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানে রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এটা করেই বিএনপি সবসময় অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে। 

তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকেই বিএনপি বলে আসছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। আসলে নির্বাচন নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত করছে বিএনপি। 

তিনি বলেন, বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডই হচ্ছে রাজনীতি ও নির্বাচনবিরোধী। একদিকে তারা রাজনীতির কথা বলবে, অন্যদিকে নির্বাচনীবিরোধী বক্তব্যে দিচ্ছে- এটা বিএনপির স্ববিরোধীতা। বাস্তবে বিএনপি গণবিরোধী ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ কারণেই তারা প্রতিটি নির্বাচনে কারচুপি দেখে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh