মামুন হোসাইন
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:২৮ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৩ এএম
প্রচ্ছদশিল্পী মামুন হোসাইন।
মূলত প্রচ্ছদ শিল্প বাণিজ্যিক ব্যাপার। মেইন স্ট্রিমের কোনো শিল্প নয়। লেখক যখন লেখেন, সেই লেখাকে আশ্রয় করে প্রচ্ছদের জন্ম হয়। সে ক্ষেত্রে লেখা যতো দিন বেঁচে থাকবে- প্রচ্ছদও ততো দিন বাঁচবে, আবার না-ও বাঁচতে পারে, কেননা- একই লেখার একাধিক প্রচ্ছদ হতে পারে এবং হয়ও।
তারপরও কথা আছে- প্রচ্ছদও পরিবর্তন হতে পারে, যেমন- রবীন্দ্রনাথের একটা বইয়েরই কতো রকম প্রচ্ছদ করেছেন- কতোভাবে, কতো শিল্পী। শিল্পী আজ একটি বইয়ের প্রচ্ছদ করলো, পরবর্তী সংস্করণে দেখা যাচ্ছে তা বদলে গেলো- এক্ষেত্রে লেখাটাই হচ্ছে আসল।
তার মানে বলা যায়- এটা এক ধরনের পরাশ্রয়ী শিল্প। প্রচ্ছদে একটা শিল্প মান থাকে বটে। তবে প্রচ্ছদ শিল্পের ক্ষেত্রে স্টাইল গুরুত্বপূর্ণ না, এখানে লেখাটাই গুরুত্বপূর্ণ। লেখার বিষয়বস্তুই ঠিক করে দেয়- শিল্পী কোন মাধ্যমে কোন স্টাইলে প্রচ্ছদ বানাবেন।
প্রচ্ছদ বানানোর সময় আমি যেটা করি- লেখক কিংবা প্রকাশকের সঙ্গে বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলি, অনেক সময় লেখকের এক ধরনের আইডিয়া থাকে- সেটা শুনি, বোঝার চেষ্টা করি। ফলে যেটা হয়- লেখার চরিত্র, ভাব, প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটু স্টাডি করি এবং সেটাই প্রচ্ছদে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।
আর ফিডব্যাক! যদি যৌক্তিক হয়- তবে ঠিক আছে, অযৌক্তিক হলে বিরক্তি লাগে। প্রচ্ছদ একটা চিপসের প্যাকেটের ডিজাইন করার মতোই পেশা! আমি প্রচ্ছদের একজন কারিগর মাত্র- অন্যান্য পেশার মতোই যিনি জামা বানান বা জুতা বানান, কারিগর হিসেবে এই জায়গাটায় প্রচ্ছদ শিল্পীর কোনো পার্থক্য নাই। অনেকেই ‘শিল্পের মূল্য দেওয়া যায় না’ এমন কথা বলে শিল্পীকে ঠকানোর চেষ্টা করেন, আমি এটাকে শিল্প-টিল্প মনে করি না- এটাকে শিল্পমান সম্পন্ন পণ্য বলা যায়! তবে আমি একটা ভালো প্রচ্ছদ বানানোর ক্ষেত্রে সাধ্যমতো চেষ্টা করি।
এবারের বইমেলায় প্রায় ১০০ প্রচ্ছদ করেছি, এর মধ্যে কিছু বইয়ের অলঙ্করণও রয়েছে। অলঙ্করণের বেশিরভাগই শিশুদের বই। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষেই তো প্রচ্ছদের কাজ হয় না- বছরজুড়েই কাজ থাকে। সারাবছরই একটা প্রস্তুতি থাকে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এসে একটু বাড়তি চাপ পড়ে।
প্রস্তুতির কথা বললে- বেশ ভালো প্রস্তুতিই থাকে আমার। ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল দুই মাধ্যমেই কাজ করি। আমার কাছে বড় লেখক-ছোট লেখক বলে আলাদা কোনো বিবেচনা নেই, সবার কাজেই সমান গুরুত্ব দিই। এবার আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন তাদের প্রচ্ছদও যেমন করেছি, আবার প্রথম বই বের হচ্ছে- এমন লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদও করেছি। লিটলম্যাগের প্রচ্ছদও করেছি।
আমার কাজের ক্ষেত্রে কারা আমার প্রতিযোগী, এমন প্রশ্নে বলতে হয়- প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা বোধ করি আমি, আর তা হলো নিজের সঙ্গে নিজের কাজের প্রতিযোগিতা, এই কাজের ক্ষেত্রে কেউ কারও প্রতিযোগী হওয়া সম্ভব না। যেহেতু একটা বাজার তৈরি হয়েছে প্রচ্ছদের- আমার কাজটাকে আমি কীভাবে ডেভেলপ করব, সেই চেষ্টাই আমার থাকে। আমি নিশ্চয়ই ধ্রুবদা বা সব্যসাচী হাজরার মতো করব না, তাদের কাজ আলাদা যার যার মতো। আমি এখনো শিখছি, জীবনভর শিখবো- প্রচ্ছদের জগতে আমি ধ্রুব দাকে ‘গুরু’ বলে মানি।