বাংলাদেশ- ডেটা সাংবাদিকতার প্রাথমিক পর্যায়

পলাশ দত্ত

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২০, ০১:৪৯ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১, ০১:০২ পিএম

পলাশ দত্ত।

পলাশ দত্ত।

পৃথিবীজুড়ে এক বদল, এর মূলে একটি বস্তু- ইন্টারনেট। গত শতকের ৮০-র দশক থেকে এ পালাবদলের শুরু। চলতি শতকের প্রথম দশকের শেষপ্রান্তে আবির্ভূত হলো ইন্টারনেটের সহযোগী স্মার্টফোন, তারপর ইতিহাস। ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন মিলে বদলে দিল মানুষের অভ্যস্ত জীবনযাপনের ধারণা- মুছে গেল বাস্তব ও ভার্চুয়াল দুনিয়ার সীমারেখা। এই সময়টিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ বলা হচ্ছে- এর মূল কেন্দ্রবিন্দু ইন্টারনেট। এই বিপ্লব সারাদুনিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযুক্ততাকে মানুষের জীবনের এক মৌল সত্য করে তুলেছে।

উনিশ শতকের শুরুতে ইংল্যান্ডে প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেল এলো, তেমনি করে ওই রেল আসতে ভারতীয় উপমহাদেশে লেগে গেল আরও ৪০ বছর। কিন্তু ১৯৯০-এ আবিষ্কৃত ইন্টারনেট বাংলাদেশ-ভারতে পৌঁছে যায় দু-তিন বছরের মধ্যেই। ২০০৭-এ আইফোন আসে আমেরিকার বাজারে। এর ৩-৫ বছরের মধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি স্মার্টফোন পৌঁছে যায় বাংলাদেশের মানুষের হাতে হাতে। উন্নত বিশ্বের মানুষ যেসময় স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপস ব্যবহার করার সুযোগ পায়, বাংলাদেশের ব্যবহারকারীর কাছেও তা সেই একই সময়েই উন্মুক্ত হয়। ইন্টারনেট এমন এক বিপ্লব যাতে নবতর বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্বের সব জায়গায় একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে যায়। এখন আর দশকের পর দশক সময় পেরিয়ে যায় না নতুন আবিষ্কার পেতে।

১.২

অন্যান্য নানা ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতায়ও সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে ইন্টারনেট। ছাপা সংবাদমাধ্যমের পরিসর সংকট ওয়েবসাইটে নেই। ফলে সাংবাদিকতায় এসেছে বিষয় ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্যের সুযোগ। ওয়েবসাইটে সংবাদে যুক্ত হচ্ছে অডিও-ভিডিও। তাও প্রায় এক দশক হতে চলল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্ত হয়েছে লং-ফর্ম ডিজিটাল স্টোরি। এই পর্যায়ে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের অবারিত পরিসরের সুযোগ নিয়ে ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে সাংবাদিকতার নতুনতর ধরন- ডেটা সাংবাদিকতা। 

১.৩

স্বাভাবিকভাবেই ডেটাকে ভিত্তি করে যে সাংবাদিকতা তা ডেটা সাংবাদিকতা। কিন্তু ডেটা কী? ডেটা বলতে আমরা সংখ্যাকেই বুঝে থাকি। ডেটার সমার্থক শব্দ হিসেবে পরিসংখ্যান শব্দটির ব্যবহারও বাংলায় চোখে পড়ে। তবে ডেটা ও পরিসংখ্যান সমার্থক নয়। কোনো বিষয়ে সংগৃহীত সংখ্যাভিত্তিক উপাত্ত হলো ডেটা। সেই ডেটা সংগ্রহ, বিন্যাস ও বিশ্লেষণে ব্যবহৃত একটি প্রক্রিয়া হলো পরিসংখ্যান। 

১.৪ 

ধরুন, আপনি কোনো একটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করতে চান। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। সেই উপাত্ত হতে পারে সংখ্যা, হতে পারে শব্দও। সংগৃহীত সেই উপাত্তগুলোই হলো আপনার প্রয়োজনীয় ডেটা। সেই ডেটা থেকে ওই বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রবণতা খুঁজে বের করতে যে-পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া ব্যবহার করবেন তা-ই হলো পরিসংখ্যান। মনে রাখা ভালো যে, সাংবাদিকতা ও পরিসংখ্যান- এই দুই ক্ষেত্রে ডেটার ব্যবহার ও বিশ্লেষণ সবসময় এক নয়।

১.৫

ডেটাভিত্তিক প্রতিবেদন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য-মতামত নির্ভর নয়। এক্ষেত্রে ডেটাই সংবাদের মর্মার্থ তুলে ধরে। ফলে ডেটার সঠিক উৎস নির্বাচন করা গেলে সংবাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব বা পক্ষদুষ্ট হওয়ার অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। বস্তুত যে কোনো বিষয়েই ডেটাভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব। ডেটার উৎস খুঁজে বের করে সেই ডেটাকে স্প্রেডশিটে ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। এরপর সেই ডেটাকে বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করতে হবে প্রবণতা। এই দুটি কাজের জন্য মানসিক ও ব্যবহারিক প্রস্তুতি থাকলেই সহজে ডেটা প্রতিবেদন তৈরি করা যায়। 

১.৬

ইন্টারনেটের এই যুগে ডেটা সংগ্রহ কঠিন কোনো কাজ নয়। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বিপুল পরিমাণ ডেটা উন্মুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নিয়মিত তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জরিপ ফল প্রকাশ করে থাকে। শিক্ষা বিষয়ক ডেটার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইট। অর্থনীতি বিষয়ক ডেটার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট। এর পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম, ইউনেস্কো, আইএলও- এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিটিরই পৃথক ডেটা পোর্টাল রয়েছে। সেখান থেকে ডেটা সংগ্রহ করে ডেটা রিপোর্ট তৈরি করা যায়। 

১.৭

বাংলাদেশে ডেটা সাংবাদিকতার জন্য এক সুবিশাল ডেটাভান্ডার বিবিএস। বিবিএসের বাৎসরিক পরিসংখ্যান গ্রন্থের ডেটা দিয়ে প্রতিদিন একাধিক ডেটা প্রতিবেদন তৈরি সম্ভব। এই গ্রন্থের ডেটাগুলো বর্তমানে বিবিএসের ওয়েবসাইটে পিডিএফ আকারে মৃত অবস্থায়ই থেকে যায়। বছরের পর বছর বাৎসরিক পরিসংখ্যান গ্রন্থ বেরোলেও সেসব ডেটা নিয়ে আমরা কোনো প্রতিবেদন তৈরি করি না।

এছাড়াও বিবিএসের ওয়েবসাইটে রয়েছে কৃষি, জলবায়ু, শিক্ষা, শ্রমশক্তি ইত্যাদি বিষয়ক নিয়মিত প্রকাশনা। ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদ প্রকাশনার এই যুগে এইসব ডেটা ব্যবহার করে নিত্যনতুন প্রতিবেদন হতে পারে। এতে করে একদিকে সাংবাদমাধ্যমের কনটেন্টের কলেবর বাড়ে, অন্যদিকে নানা বিষয়ে পরিচালিত জরিপের ফল-তথ্য-ডেটা একটি পিডিএফ প্রকাশনার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায়। ডেটাগুলোর অন্তর্নিহিত বক্তব্য পৌঁছায় মানুষের কাছে, যে ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম এখনো মনোযোগ দিতে পারেনি। 

১.৮

ডেটাকে টেবল আকারে উপস্থাপন না করে গ্রাফ হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আগে থেকেই চালু আছে। তবে সংবাদে ডেটার একক ব্যবহার বা ডেটাভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা বাংলাদেশে এখনো সেভাবে দেখা যায়নি। হাতেগোনা দু-একটি সংবাদপত্রে সংখ্যাকে বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো করে ব্যবহারের চেষ্টা দেখা গেছে। তাতেও থেকে গেছে ত্রুটি-বিচ্যুতি। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বিশেষ ঘটনায় ইনফোগ্রাফিক তৈরির একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এদেশে ডেটাকে ভিত্তি করে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশের যে অপরিমেয় সম্ভাবনা তা এখনো পর্যন্ত বিকশিত হয়নি।

১.৯

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বার্তাকক্ষ দুটি বিষয় সামাল দিতে পারলে সাংবাদিকদের জন্য ডেটা সাংবাদিকতার পথ সহজ হতে পারে। প্রথমত, সাংবাদিকদের ডেটামুখী মানসিকতা সৃষ্টি; দ্বিতীয়ত, ডেটা সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্তরের অনলাইন টুলসের সঙ্গে পরিচিতি। ডেটামুখী মানসিকতা সাংবাদিকদের যে কোনো বিষয়কে ডেটার ভিত্তিতে উপস্থাপনে উৎসাহী করবে। ফলে দৈনন্দিন ইভেন্ট ভিত্তিক খবরকেও তিনি ডেটা সাংবাদিকতার কোনো একটি রূপে প্রকাশ করতে পারবেন। সফল হবেন ইভেন্টকে ভিত্তি করে ডেটা দিয়ে ঘটনার সামগ্রিক রূপ তুলে ধরতে। সক্ষম হবেন ইভেন্টের বাইরে শুধু ডেটার ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিবেদন তৈরিতে।

সাংবাদিকদের বেশিরভাগই খুব স্বাভাবিকভাবেই গ্রাফিক্স সফটওয়্যারে পারদর্শী নন। এ কারণে ডেটা সাংবাদিকতার অন্তর্ভুক্ত যে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরিতে তার সংবাদমাধ্যমের গ্রাফিক্স বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এই দ্বিতীয় ব্যক্তির ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা যায় বিভিন্ন অনলাইন টুলসের মাধ্যমে। বিনামূল্যের বিভিন্ন অনলাইন টুলস ব্যবহার করে একজন সাংবাদিক নিজেই ডেটা কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো শুধুই ডেটাভিত্তিক কনটেন্ট তৈরির জন্য গ্রাফিক্স বিভাগের এক বা একাধিক কর্মীকে নিযুক্ত করতে পারে।

ডেটা দিয়ে সাংবাদিকতা কীভাবে?

২.১

ডেটা সাংবাদিকতা কি আসলেই কোনো সাংবাদিকতা? সংবাদ বলতে আমরা মূলত বুঝি ঘটে যাওয়া ঘটনার উপস্থাপন। মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে গতকাল যা ঘটেছে, আজ তা সবিস্তারে বা সংক্ষেপে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করাই সাংবাদিকতা। অনলাইন/টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে মূলত আজ একটু আগে যা ঘটেছে তা পাঠকের সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকতা। 

মুদ্রিত, অনলাইন, টেলিভিশন- এই তিন মাধ্যমের সাংবাদিকতাতেই ডেটার ভূমিকা কোথায়? ঘটনা-দুর্ঘটনা-

অনুসন্ধান এসব তো ডেটাকে ভিত্তি করে ঘটে না। তাহলে সাংবাদিকতায় আমরা ডেটা ব্যবহার করব কীভাবে? প্রচলিত প্রতিবেদনে যে ডেটার ব্যবহার হয় না, তা নয়। বিশেষ করে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট নানা খবরে আমরা টেবল বা গ্রাফ আকারে কিছু ডেটার ব্যবহার দেখতে পাই। তবে এসব ক্ষেত্রে ডেটা ব্যবহৃত হয় প্রতিবেদনের পরিপূরক হিসেবে। শুধুই ডেটার ওপর নির্ভর করে প্রতিবেদন তৈরির প্রবণতা বাংলাদেশে এখনো শুরু হয়নি।

২.২

শুধু ডেটাকে ভিত্তি করেও প্রতিবেদন তৈরি হতে পারে। ধরা যাক, সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক খবর। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রায় প্রতিদিনই দেশের সংবাদপত্রগুলোয় প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু সড়কে প্রাণহানির সামগ্রিক চিত্র নিয়ে খবর প্রকাশ হয় খুবই কম। যাও হয় তাও টেক্সটভিত্তিক। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে স্কুলশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ের কথা মনে করুন। সে সময় সংবাদপত্রগুলো প্রতিদিন সড়কে নৈরাজ্য বিষয়ক খবর প্রকাশ করেছে।

কিন্তু গত ১০-১৫ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার ডেটাভিত্তিক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক ডেটা আমাদের হাতের নাগালেই রয়েছে। এই ডেটা পেতে সাংবাদিকের শারীরিকভাবে কোনো সরকারি অফিসে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত বাৎসরিক পরিসংখ্যান গ্রন্থেই এই ডেটা পাওয়া যায়। সেখানে দেশের ৬৪ জেলায় গত কয়েক বছরের সড়ক দুর্ঘটনা ও তাতে আহত-নিহতের ডেটা দেওয়া রয়েছে। সেই ডেটা নিয়ে পুরো দেশের সড়ক পরিস্থিতি বিষয়ে ডেটা প্রতিবেদন করা সম্ভব ছিল। কেমন হতে পারত সেই প্রতিবেদন?

ঢাকা বিভাগে ২০১৭ সালে কোন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয়েছিল? বিভাগের জেলাগুলোতে ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণতা, অর্থাৎ হ্রাস-বৃদ্ধি, কেমন? বছরওয়ারি হিসেবে এইসব প্রশ্নের উত্তর সহজেই পাঠক বুঝে নিতে পারেন এই গ্রাফিক-রিপোর্ট থেকে।পাঠককে শুধু সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বা দুর্ঘটনা হ্রাস-বৃদ্ধির চিত্র সম্পর্কে জানালেই হবে কী? দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বিষয়েও তো জানতে চাইবেন পাঠক। সেজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর বার্ষিক পরিসংখ্যান গ্রন্থ থেকেই আরেকটি ডেটা কনটেন্ট তৈরি করা সম্ভব।

ঢাকা বিভাগে ২০১৭ সালে কোন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মানুষ মারা গেছে? বিভাগের জেলাগুলোতে ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রবণতা, অর্থাৎ হ্রাস-বৃদ্ধি, কেমন? বছরওয়ারি হিসেবে এইসব প্রশ্নের উত্তরও সহজেই পাঠক বুঝে নিতে পারেন নিচের গ্রাফিক-রিপোর্ট থেকে। 

২.৩

শুধু সংখ্যাই নয়। শব্দও বিবেচিত হতে পারে ডেটা হিসেবে। বিশেষ কোনো শব্দকে ভিত্তি করে সংগৃহীত উপাত্তকে ডেটা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিভাবে? ধরা যাক, ধর্ষণ মামলা। শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে দিতে অবশেষে একজনকে গায়ে আগুন দিয়ে পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে। সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা কি একক বিচ্ছিন্ন আচমকা কোনো ঘটনা? এই যে ভয়ংকরতম এক নৃশংস অপরাধ এর আশঙ্কা তো বাংলাদেশের সমাজেই ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছিল। এই প্রবণতাটি কিভাবে তুলে ধরা সম্ভব? এক্ষেত্রে শব্দকে ডেটা হিসেবে ব্যবহারের প্রসঙ্গটি আসে।

২.৪

ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহার শব্দবন্ধটি হতে পারে আমাদের ভিত্তি। এ শব্দবন্ধকে ভিত্তি করে আমরা বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহার বিষয়ক প্রবণতাটি উন্মোচন করার চেষ্টা করতে পারি। এ জন্য আমাদের প্রথমে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর খুঁজে বের করতে হবে। তাই গুগলে আমরা ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে শব্দবন্ধ লিখে আমরা সার্চ করতে পারি। এই সার্চের ফলাফল পৃষ্ঠায় ক্লিক করে শুধুই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তালিকা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অষষ ট্যাবে ক্লিক করে পাওয়া ফলাফলের পাতাটিই ব্যবহার করব।

খবরের যে-তালিকা গুগল আমাদের দেখাবে তা সময় অনুযায়ী বিন্যস্ত থাকবে না । সময় অনুযায়ী বিন্যস্ত করার জন্য আমাদের ঞড়ড়ষং ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। তখন আমর একটি ট্যাব পাব। সেই ট্যাবে ক্লিক করলে অপশন পাওয়া যাবে। এটিতে ক্লিক করলে খবরগুলো প্রকাশে তারিখ অনুযায়ী বিন্যস্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো আমাদের কাক্সিক্ষত ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে শব্দবন্ধযুক্ত খবরগুলো আর সঠিক বিন্যাসে পাওয়া যাবে না। তাই এক্ষেত্রে ঝড়ৎঃবফ নু ৎবষবাধহপব অপশনটি চালু রাখাই ভালো।

২.৫

গুগল সার্চে আমরা একটি বিষয়ের প্রবণতা উন্মোচন করতে চাইছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ক খবর খোঁজার ক্ষেত্রে আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা চিহ্নিত করে নিতে হবে শুরুতেই। গুগল সার্চে খোঁজার সময়কাল সহজে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়। ট্যাবে ক্লিক করলে তিনটি ট্যাব দৃশমান হয়। এই ট্যাবে ক্লিক করলে সময়কাল নির্দিষ্ট করার অপশন পাওয়া যায়। এতে গত এক ঘণ্টা থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট করা যায় এক ক্লিকেই। তবে মাস-তারিখ ধরে সময় নির্দিষ্ট করতে চাইলে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পরবর্তী স্ক্রিনে দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

২.৬

এই খবরের তালিকা থেকেই আমরা শব্দবন্ধকে ডেটায় রূপান্তরের কাজটি করতে পারি। এ পর্যায়ের কাজটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ। প্রথমে মাইক্রোসফট এক্সেলে একটি ফাইল তৈরি করব। সেই ফাইলে জেলা, প্রকাশ, অপরাধী, মামলা/জিডি, সূত্র, অভিযোগ, সময় এরকম একাধিক কলাম-হেড থাকবে। এরপর গুগলের সেই তালিকা থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় খবরটির লিঙ্ক কপি করে এক্সেলের সূত্র কলামে পেস্ট করব। গুগলের তালিকা খবরের লিঙ্কের ঠিক নিচেই সেটি প্রকাশের তারিখ দেওয়া থাকে। সেই তারিখটি আমরা স্প্রেডশিটে প্রকাশ কলামে যুক্ত করবো। এরপর খবরের লিঙ্ক খুললে স্প্রেডশিটের বাকি কলামগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্তগুলো পাওয়া যাবে। সেগুলো একে একে স্প্রেডশিটের নির্দিষ্ট কলামে যুক্ত করতে হবে। 

২.৭

এভাবে ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে শব্দবন্ধটির ভিত্তিতে একাধিক খবর থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হলো স্প্রেডশিটের কলাম-ওয়ারি বিন্যস্ত করায় সেই সব টেক্সটভিত্তিক তথ্য রূপান্তরিত হলো আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটায়। ওপরের স্প্রেডশিটে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ডেটা রয়েছে। এবার এই ডেটাকে বিশ্লেষণ করা যায়। খুব সহজেই যা দেখা যায় তা হলো, ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে ১৫ মাসে ১৫টি অর্থাৎ গড়ে মাসে অন্তত একটি করে হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোন জেলায় কয়টি করে এরকম অপরাধ হয়েছে? কয়টি অপরাধে মামলা/জিডি হয়েছে? অভিযুক্তরা কি আইনের আওতায় এসেছে? মামলার কতদিন পর অভিযুক্তরা হুমকি-ধমকি দেয় বা হামলা করে? এইসব প্রশ্নের উত্তর স্প্রেডশিটের ডেটায় দৃশ্যমান।

২.৮

ডেটা থেকে আমরা প্রবণতার নানা ধরন দেখতে পেলাম। কিন্তু এই স্প্রেডশিটটি তো আর প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এগুলোকে তো পাঠকের উপযোগী করে প্রকাশ করতে হবে। এই যে দৃশ্যমান তথ্যগুলো এগুলো থেকে অন্তত তিনটি প্রবণতা চিহ্নিত করে ডেটা রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব। 

ক. উল্লেখিত সোয়া এক বছরে দেশের কোন জেলায় ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে হুমকি-হামলার ঘটনা বেশি ঘটেছে।

খ. মামলার পর কয়টি ঘটনায় আসামি গ্রেফতার হয়েছে বা হয়নি।

গ. মামলার কতদিন পর হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটেছে।

২.৯

এই ডেটা রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমের মুদ্রিত ও অনলাইন দুই সংস্করণেই ব্যবহারের উপযোগী। এই ডেটা রিপোর্টটি তৈরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমের গ্রাফিক্স বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। তবে মৌল কোনো গ্রাফিক্স সফটওয়্যারের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু ব্যবহার জেনে নিয়ে এই ডেটা রিপোর্ট একজন সাংবাদিক নিজেই তৈরি করতে পারেন। আবার অনলাইন গ্রাফিক্স টুলের সহায়তা নিয়েও একজন সাংবাদিকের পক্ষে এই ডেটা রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব।

এই ইনফোগ্রাফিকটি তৈরি করা হয়েছে ইঙ্কস্কেপ নামের একটি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে। ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করেও এই ইনফোগ্রাফিক তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু যারা কোনো ধরনের গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহারে সক্ষম নন তারা কী করবেন? গ্রাফিক্স সফটওয়্যারে দক্ষতা না থাকার কারণে কি তারা ইনফোগ্রাফিক তৈরি করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। কারণ এটা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। ইন্টারনেট বিপ্লবের যুগ। বিনামূল্যে বিভিন্ন অনলাইন সফটওয়্যার ব্যবহার সহজেই একজন সাংবাদিক একটি ইনফোগ্রাফিক তৈরি করতে পারেন।

কেন ডেটা সাংবাদিকতা?

৩.১

প্রতিবেদনে ডেটা ব্যবহার করবেন কেন? কিংবা শুধুই ডেটাকে ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন কেন? বাংলাদেশে গত এক দশকে বিপুল পরিমাণ ডেটা উন্মুক্ত হয়েছে। এক দশক আগেও নানা বিষয়ে তথ্য জানতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সশরীরে যেতে হতো। যাওয়ার পরও তথ্য-উপাত্ত সেখানে সহজলভ্য ছিল না। বিপুল পরিমাণ সময় ব্যয় করে কিছু তথ্য হয়তো পাওয়া যেত। ইন্টারনেটের বিস্তৃতি তথ্য-উপাত্তকে একেবারে আমাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। এখন অফিস-বাসায় বসে কম্পিউটারে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়েই বিভিন্ন বিষয়ের ডেটা পাওয়া সম্ভব। সম্ভব বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি নানা প্রকাশনা হাতে পাওয়া।

সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত নানা রকম জরিপ করছে। সেইসব জরিপের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নিয়মিতই প্রকাশনাও হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে। অনেক ক্ষেত্রে জরিপের ফল নিয়ে সংবাদ সম্মলেনও করে থাকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (এসভিআরএস) জরিপ। ব্যুরো প্রতি বছর এই জরিপটি পরিচালনা করে থাকে। জরিপ শেষে এর ফল নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও করে ব্যুরো। এতে সচরাচর বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয় ব্যুরো। ফলে সংবাদ সম্মেলনের দিন সব অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে গড় আয়ু বিষয়ক খবরটিই প্রকাশ হয়, প্রাধান্য পায়। একইভাবে পরদিন দেশের সব মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমে ওই বিষয়টিই মূল বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়।

৩.২

অথচ বিবিএসের ওই প্রতিবেদনটি শ-দুয়েক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। এতে থাকে বাংলাদেশের মানুষের খাওয়ার পানির উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বিপুল পরিমাণ ডেটা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমগুলো বিবিএসের সংবাদ সম্মলনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতেই আটকে থাকে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার নানা সূচক নির্দেশক এই বিপুল ডেটার অন্তর্নিহিত অর্থ আর মানুষের কাছে পৌঁছায় না। যেমন দেশের নারী-পুরুষের বিয়ের গড় বয়স। এই বিষয়টি এসভিআরএস-র অন্তর্ভুক্ত। এই ডেটা বিশ্লেষণে যে-তথ্য উঠে আসে তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় না। 

২০১৭ ও ২০১৬ সালের এসভিআরএস ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় রাজশাহী বিভাগে ২০১৭ সালে নারীর বিয়ের গড় বয়স  ১৮-র নিচে নেমে গেছে। একই সময়ে সিলেট বিভাগে নারীর বিয়ের গড় বয়স হয়েছে ২১ বছর। 

৩.৩

ডেটাভিত্তিক সংবাদ একটি সংবাদমাধ্যমের সংবাদে বৈচিত্র্য যোগ করে। সংবাদ সংগ্রহের প্রচল পদ্ধতিতে সংবাদ তৈরি সম্ভব নয় এমন সব বিষয়ে উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে সংবাদ তৈরি করা যায়। যেমন ধরা যাক প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি। বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী বললে আমাদের মনে শ্রমিকদের কথাই আমাদের মনে আসে। কিন্তু শ্রমিকের পেশা ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিরা তো বিদেশে আরও বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত। সেইসব পেশাভিত্তিক তথ্যের খবর তৈরি করা যায় ডেটার ভিত্তিতে। যেমন বিবিএসের এসআইআর প্রতিবেদন ২০১৬ এর ডেটাভিত্তিক নিচের প্রতিবেদনটি:

বিবিএসের প্রকাশিত ডেটাকে ভিত্তি করে এই যে প্রতিবেদন, এরকম প্রতিবেদন বাংলাদেশে বসে একজন সাংবাদিকের পক্ষে প্রচল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব নয়। অথচ প্রতিবেদন যে তথ্য উঠে এসেছে তা পাঠকের জন্য যথেষ্ট আগ্রহোদ্দীপক। তারা জানতে পারছেন যে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের এক-তৃতীয়াংশের পেশা চাকরি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রায় অর্ধেকের পেশা চাকরি।

এ তো গেল প্রবাসীদের পেশা বিষয়ে ডেটার উন্মোচনের দিকটি। বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিতরা কোন দেশে বেশি প্রবাসী হন? এমন প্রশ্নের জবাবও দেশে বসে সংবাদ তৈরির প্রচল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। অথচ ডেটার ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনের মাধ্যমে এরকম প্রশ্নের জবাবও পাঠকের জন্য হাজির করা যায়। দেশে বসে বিবিএসের এসআইআর প্রতিবেদন ২০১৬ থেকেই তৈরি সম্ভব এমন রিপোর্ট:

কোনো অতিরিক্ত টেক্সট যোগ না করে, শুধুই ডেটার ভিত্তিতে একটি গ্রাফের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষিত প্রবাসীদের পছন্দের দেশটি দেখিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই ডেটাকে ব্যবহার করে প্রচল টেক্সট ভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করতে গেলে তা হতো অসংখ্য সংখ্যা ও টেক্সটের সমন্বয় যা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতেও ব্যর্থ হতো।

আবার ধরা যাক রেমিট্যান্সের বিষয়টি। প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রতিবছর। গ্রাহক পরিবারগুলো তা কীভাবে কোন্ কোন খাতে খরচ করে? এমন সব প্রশ্নের জবাবও রয়েছে বিবিএসের সেই প্রতিবেদনের ডেটায়। (ডেটা প্রতিবেদন দেখুন আগের পৃষ্ঠায়)। কোন বিভাগের মানুষ কোন খাতে রেমিট্যান্সের অর্থ বেশি খরচ করেন- সেই ধারণাও পাওয়া যায় এই ডেটা প্রতিবেদন থেকে। 

৩.৪

বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে ডেটা। যেমন শিক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদন। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা বিষয়ক নানা ধরনের ডেটা পাওয়া যায়। এসব ডেটাকে ভিত্তি করে প্রতি বছর মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় প্রতিবেদন

প্রকাশ করা যায়। এতে একদিকে সংবাদে যুক্ত হতে পারে নতুন মাত্রা, অন্যদিকে তুলে ধরা যেতে পারে শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট :

৩.৫

ডেটা প্রতিবেদন কোনো একটি বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। ধরা যাক, ২০১৯ সালের আলোচিত বনানী অগ্নিকান্ডের খবরটি। ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানীতে মার্চ মাসের ওই অগ্নি-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৫ জন। এ নিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম যত দ্রুত সম্ভব পাঠকদের হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ঘটনাস্থল থেকে সার্বক্ষণিক সরাসরি সম্প্রচার করেছে। সংবাদপত্রগুলো ঘটনার পরদিন এ নিয়ে বিস্তারিত খবর প্রকাশ করেছে।

কিন্তু দেশে অগ্নিকান্ডের সামগ্রিক পরিস্থিতি খবরে তুলে ধরব কীভাবে? ডেটার ভিত্তিতে সেটা করা সম্ভব। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়েবসাইটে দেশে গত দুই দশকে ঘটে যাওয়া অগ্নিকা-ের বিস্তারিত ডেটা পাওয়া যায়। সেই ডেটাকে বিশ্লেষণ করে অগ্নিকান্ডের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ডেটা প্রতিবেদন হতে পারে ।


লেখক : সাংবাদিক, কবি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh