প্রকাশ: ১৭ মে ২০২০, ০৪:২৫ পিএম
ধারণা করা হয়েছিল করোনাকালে বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে; কিন্তু বাংলাদেশে লকডাউনের কারণে যেহেতু রাস্তাঘাট ফাঁকা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সব সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেয়ে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিতকরণ এবং ত্রাণ বিতরণসহ করোনাভাইরাসজনিত নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত; এতে অপরাধী গ্রেফতার বা অপরাধ দমন অভিযানও অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এই সুযোগে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধগুলো বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি খুনের ঘটনাও সামনে এসেছে। সম্প্রতি সরকারের কাছে জমা দেয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও রমজান ও ঈদ উপলক্ষে রাজধানীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ছিনতাই-ডাকাতির শঙ্কার চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় বিভিন্ন ছিনতাই এবং ডাকাতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বেড়ে গেছে পারিবারিক সহিংসতাও।
শুধু তা-ই নয়, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন মহাসড়কের দুই থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে মাদকের কারবার। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র। কেউ অ্যাম্বুলেন্স আবার কেউ পণ্যবাহী ট্রাকে করে এসব মাদক পাচার করছে।
করোনাভাইরাসের সময়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষজনের কাজের সুযোগ কমে গেছে এবং অনেকেই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পরেছেন। ফলে অর্থনৈতিক নিয়মেই এই বেকার শ্রেণির মধ্যে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাই সরকারকে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে, যাতে তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়।
পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অনেকদিন ধরেই কমে এসেছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। তাই এখন প্রয়োজন তালিকাভুক্ত অপরাধী, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা এবং রাজধানীর প্রত্যেকটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে কড়া ব্যারিকেড ও তল্লাশি প্রয়োজন, যাতে অপরাধ করে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।
পরিশেষে, সামগ্রিকভাবে এই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সামরিক বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে।