মাহে রমজান বিদায়ের ধ্বনি শোনা যায়

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ২২ মে ২০২০, ০৪:৪২ এএম

আজ ২৮ রমজান। পবিত্র জুমার দিন। এই রমজানের শেষ জুমা। জুমাতুল বিদা। 

কল্যাণময় রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর দু-একদিন পরেই আমাদের থেকে বিদায় নেবে রমজান মাস। জুমাতুল বিদা নামে কোরআন হাদিসে আলাদা কোনো জুমার দিন নেই। প্রতি জুমার মতো এ জুমার দিনটিরও গুরুত্ব রয়েছে। রমজানের শেষ জুমা হিসেবে আমাদের মাঝে এ দিনে মসজিদে উপস্থিত হবার আগ্রহ বেশি থাকে। রমজানের প্রথম জুমার মতো রমজানের শেষ জুমা মসজিদে মুসল্লির উপস্থিতি বেড়ে যায়।

এ দিনে বান্দা তার অতীতের গুনাহ থেকে ক্ষমা চায়, নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কারণ তা সবারই জানা। 

নবীজি (সা.) জুমার নামাজে খুতবা প্রদানের জন্য মিম্বরে উঠেছিলেন আর প্রতিটি সিঁড়িতে বলছিলেন, ‘আমিন’ (কবুল কর)। পরবর্তীতে সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এর কারণ কী? নবীজি জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘যে রমজান মাস পেল আর নিজেকে ক্ষমা করাতে পারলো না সে ধ্বংস হোক।’ 

ফেরেশতার এ কথায় নবীজি আমিন বলেছিলেন। রমজান মাস পেয়ে নিজেকে ক্ষমা করাতে না পারলে, নাজাতের ১০ দিনে নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করাতে না পারলে তো ধ্বংস অনিবার্য। তাই প্রত্যেক বান্দা জুমার এ দিনে কান্নাকাটির মাধ্যমে মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন।

আনাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রতি জুমার দিনে প্রতি ঘণ্টায় ছয় লাখ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। (সালমান মনসুরপুরী: কিতাবুল মাসায়িল : পৃ. ৪৫১) 

এছাড়াও জুমার দিনে গোসল করে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসা, নফল ইবাদত করা, চুপচাপ খুতবা শোনা ও জুমার নামাজ আদায় করার দ্বারাও আগামী এক সপ্তাহের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, আরো অতিরিক্ত তিনদিনের গুনাহও মাফ করে দেয়া হয়। 

আরেক হাদিসে জুমার নামাজের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ বা কদমের জন্য ক্ষমার ঘোষণা রয়েছে। তাই এ জুমাতুল বিদা মুমিনের জন্য ক্ষমা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়।

প্রতিটি জুমাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি জুমা কারও ছুটে গেলে তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে সন্দিহান হয়ে যেতে হয়। জুমার দিনে বেশি করে দরুদ পড়ার কথাও রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি করে দরুদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে তার দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।’ এ পদ্ধতি এখনো চলছে। এটি সারা বছরেরই আমল। প্রতি জুমার ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

জুমার দিনে সুরা কাহাফ পড়ার কথা রয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, সুরা কাহাফ পাঠকারীর জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তা আলো হয়। সুরা কাহাফ পড়ার কারণে আগামী আটদিন সব ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকে তার পাঠকারী, এমনকি দাজ্জালের ফিতনা থেকেও।

জুমাতুল বিদা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে আর কিছু মুর্হূত, কয়েকটি দিন অবশিষ্ট আছে বরকতময়, কল্যাণময় ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এ রমজানের। এ সময়গুলোকে কাজে লাগাতে হবে। এ সময়ে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রাতকে আমাদের জন্য কল্যাণকর করাতে হবে। দিনকে বরকতময় করাতে হবে। 

আমাদের অলসতা যেন রমজানের ফজিলতপ্রাপ্তি থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করতে না পারে। তারাবি, কদর, তাহাজ্জুদ কোনোটিই যেন বাদ না পড়ে আমাদের আমল থেকে। শেষ মুহূর্তে আমাদের আমলের গতি আরো বাড়িয়ে দিন রাব্বুল আলামিন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh