শপিং

সুমন্ত আসলাম

প্রকাশ: ২২ মে ২০২০, ০২:১৬ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২০, ০৫:১৪ পিএম

কিছুটা উচ্চৈঃস্বরে রানু ভাবী চোখ দুটো বড় বড় করে পাশের বাসার মিতু ভাবীকে বললেন, ‘সত্যি বলছেন ভাবী! কী ভয়ংকর কথা, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না এটা।’

‘তবে আর বলছি কি ভাবী!’ মিতু ভাবী একটু আয়েশ করে বসে বললেন, ‘আপনাকে এত করে বললাম, তবু তো আমার বাসায় একবার গেলেন না, গেলে আপনাকে সরাসরি দেখাতে পারতাম, ব্যাপারটা আসলে কী হয়েছিল?’

‘আসলে সময় পাই না।’ রানু ভাবী কিছুটা অপরাধী গলায় বললেন, ‘অল্প দিনের মধ্যে একদিন যাব ভাবী। তা, ঘটনাটা আপনি আরেকবার বলবেন, প্লিজ।’

সারা মুখে বিগলিত হাসি মিতু ভাবীর, ‘অবশ্যই ভাবী, অবশ্যই। এটা বলার জন্যই তো আমি আপনার বাসায় এসেছি। তাহলে ভাবী, আমি প্রথম থেকে শুরু করি আবার?’

কাছাকাছি আরও একটু এগিয়ে এলেন রানু ভাবী, ‘জি ভাবী, জি ভাবী।’

‘সকালে ঘুম ভাঙার পর পরশু কেনা নতুন ডাবল খাট থেকে নামতেই মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা মস্ত বড় সাপ ফণা তুলে আছে মেঝের ওপর।’ মিতু ভাবী শুরু করলেন। 

‘সাপটা আসলে কত বড় ছিল ভাবী?’ প্রশ্ন করলেন রানু ভাবী। 

‘এই ধরেন দশ-বারো হাত তো হবেই।’

‘দশ-বারো হাত! না আরও একটু কম হবে?’

‘হ্যাঁ, একটু কমই হবে, সাত-আট হাত হবে।’

‘ঠিক সাত-আট হাতই হবে, না আরও একটু ছোট হবে?’

‘মনে হয় আরও একটু ছোটই হবে।’

‘ঠিক আছে, সাপটা যত বড়ই হোক সেটা ব্যাপার না, আপনি বলে যান ভাবী।’

‘হ্যাঁ, তারপর সাপটা আমাকে দেখেই মেঝে থেকে আস্তে আস্তে আমাদের সাত-আটদিন আগে কেনা বায়ান্ন ইঞ্চি টেলিভিশনের ওপর উঠল। সেটার ওপর কিছুক্ষণ থেকে ওটা গেল আমাদের লম্বা ফ্রিজটার পাশে। কী মনে করে সাপটা সেই লম্বা ফ্রিজে না উঠে সোজা এসে বেয়ে উঠল আমাদের এই তো দু’দিন আগে কেনা ডাবল ডিপ ফ্রিজটার ওপর। সেখানে উঠেই ব্যাটা আর নড়েও না চড়েও না।’ হাসতে হাসতে নিতু ভাবী রানু ভাবীর গায়ের ওপর গড়িয়ে পড়ল, ‘মনে হচ্ছিল ডাবল ডিপ ফ্রিজটা পছন্দ হয়েছে সাপটার।’

‘তারপর!’ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে রানু ভাবীর চোখ দুটো। 

‘তারপর সাপটা ধীরে ধীরে সেখান থেকে নেমে আমাদের যে তিন পার্ট করা খাঁটি সেগুন কাঠের আলমারিটা আছে না, ওই যে এক মাস আগে অর্ডার দিয়েছিলাম, গত শনিবার ওই ফার্নিচারের দোকানে গিয়ে আরও একবার দেখে বাসায় নিয়ে এসেছি, তার ওপর উঠল। ভাবী, বিশ্বাস করবেন না, তখন আমার সারা শরীরে কী কাঁপুনি!’

‘কাঁপুনি তো হবেই, শুনে আমার শরীরই কাঁপছে, তারপর ভাবী?’

‘তারপর ওই ঘিনঘিনে প্রাণীটা আমাদের ছোট মাইক্রোওভেনটা পাশ কেটে হেলেদুলে চলে গেল টেলিভিশনের সঙ্গে কেনা বড় মাইক্রোওভেনটার কাছে। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ না থেকে আমাদের বেলজিয়াম আয়নার যে ড্রেসিংটেবিলটা আছে, তার সামনে দাঁড়াল।’

‘সাপটার বোধহয় নিজের চেহারা দেখার ইচ্ছে হয়েছিল!’

‘আমারও তা-ই মনে হয়েছিল, বেজলিয়ামের কাচের আয়না তো, একেবারে নতুনও। তা যা বলছিলাম, তারপর সাপটা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে খুব আয়েশি ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল আমাদের শোকেসের দিকে। সবচেয়ে চমকে উঠেছি আমি ওই সময়টায়!’

‘কেন?’

‘কারণ সাপটা শোকেসে উঠেই কেমন যেন ফোঁস ফোঁস করে শব্দ করছিল। মনে হচ্ছিল, রাগে শোকেসটা ফেলে দেবে সে। জানেন ভাবী, শোকেসটা ফেলে দিলে কী হতো? এই শোকেসের ভেতর আমাদের চারটা পুরো ডিনার সেটসহ আরও অনেক ক্রোকারিজ আছে। একেকটা যা দামি! কয়দিন আগে কিনেছি কতগুলো। দুটো ডিনার সেট তো আমার বড় ভাই দেশের বাইরে থেকে পাঠিয়েছে, যা সুন্দর না! সাদা ধবধবে, পাশে পিঙ্ক কালারের কাজ করা, আর...!’ 

‘ভাবী, আমরা সাপের কথা বলছিলাম।’

‘ও হ্যাঁ, তারপর সাপটা শোকেস থেকে নেমে আবার চলে এলো মেঝের ওপর। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে চুপচাপ থেকে কী যেন ভাবছিল ওটা। একটু পর সে সোজা আমরা যে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা খরচ করে খাটটা বানিয়েছি, তার ওপর গিয়ে ঘুমানোর মতো শুয়ে পড়ল।’

‘বলেন কি!’

‘হ্যাঁ ভাবী, শেষে করল কী, জানেন? ইতালির যে পায়ের জুতো জোড়া কিনেছি ঈদ উপলক্ষে, সেটা বেয়ে সে আমার গায়ে উঠতে শুরু করল।’

‘আপনি তখন কীভাবে বসে ছিলেন?’

‘আপনি যেভাবে বসে আছেন, ঠিক সেভাবে।’

রানু ভাবী সঙ্গে সঙ্গে পা দুটো উঁচুতে তুলে চিৎকার করে বললেন, ‘ওমা, বলেন কি, সাংঘাতিক ধরনের সাপ তো!’

মিতু ভাবী সঙ্গে সঙ্গে হতাশ স্বরে বললেন, ‘ভাবী, এতক্ষণ এত কিছুর কথা বললাম, আর আপনি শুধু সাপটার কথাই বললেন! করোনার এই সাংঘাতিক সময়ে, রিস্ক নিয়ে মার্কেটে গিয়ে আমার বাসায় যে এত জিনিসপত্র নিয়ে এলাম, তার কথা বললেন না!’ কান্না কান্না চেহারা করে ফেললেন তিনি, ‘মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ভাবী!’...

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh