ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২০, ১১:৪৯ এএম
করোনা বোকাবেলা করে মাঠে ফিরেছে ফুটবল। জার্মান বুন্দেসলিগা শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। ইতালি, স্পেন এবং ইংল্যান্ডেও ফুটবল ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে সবধরনের ক্রিকেটই বন্ধ। কোনো দেশের বোর্ডই এখনো ঝুঁকি নিয়ে শুরু করতে পারছে না। যদিও বোর্ডসহ অনেক খেলোয়াড়রাও মাঠে ফিরতে আগ্রহী।
তবে এখন থেকে চাইলেই যেভাবে সেভাবে খেলতে পারবে না দলগুলো। মেনে চলতে হবে আইসিসির নতুন গাইডলাইন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ইতোমধ্যে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বোর্ডগুলোর চিকিৎসক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদে ক্রিকেট মাঠে ফেরাতে সদস্য দেশগুলোকে একটি গাইডলাইন দিয়েছে আইসিসি।
শুক্রবার (২২ মে) বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কমিউনিটি, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিরাপদে ফেরাতে বোর্ডগুলোর চিকিৎসক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই গাইডলাইন তৈরি করেছে আইসিসির চিকিৎসা উপদেষ্টা কমিটি।
গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি বোর্ডের একজন করে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা বা বায়ো সেফটি কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। যার কাজ হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি খেলোয়াড়রা অনুশীলনে মেনে চলছে কি না, তা নিশ্চিত করা।
সদস্য দেশগুলোকে সফরের অন্তত ১৪ দিন আগে একটি আইসোলেশন ক্যাম্পের কথা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। যেখানে দলের সবার তাপমাত্রা মাপা ও কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে খেলোয়াড়দের জন্য নিরাপদ অনুশীলন গ্রাউন্ড ও ম্যাচ ভেন্যু নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে সব সময় দেড় মিটার দূরত্ব (অথবা সংশ্লিষ্ট সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী) বজায় রাখতে হবে। অনুশীলনে এসে খেলোয়াড়দের গোসল করতে ও ড্রেসিংরুম ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অনুশীলনের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে আসতে বলা হয়েছে।
ম্যাচের সময়ে প্রতিটি মাঠে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইসিসির ক্রিকেট কমিটি বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে। বল নিয়ে নতুন কিছু নির্দেশনাও এসেছে। দুই ওভারের মাঝে খেলোয়াড়রা ক্যাপ, তোয়ালে, সোয়েটার ইত্যাদি জিনিসপত্র আম্পায়ারকে দিতে পারবেন না। বল ধরার ক্ষেত্রে আম্পায়ারকে ব্যবহার করতে হবে গ্লাভস।
মাঠে উদযাপনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ এড়িয়ে যাওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কোনো ম্যাচে কারো কভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা গেলে সবার পরীক্ষা করাতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটা সময় আইসোলেশনে থাকতে হবে।
সফর নিয়ে রয়েছে কড়া নির্দেশনা। প্রথমত, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে, ফ্লাইটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হোটেলে দলগুলোর জন্য নির্দিষ্ট ফ্লোর ঠিক করে দিতে হবে।
অনুশীলন শুরু হবে চার ধাপে। এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে যাওয়া নির্ভর করবে সরকারের বিধিনিষেধের ওপর। প্রথম ধাপে হবে একক পর্যায়ে অনুশীলন। ইংল্যান্ড যেটি ইতোমধ্যে তাদের বোলারদের জন্য শুরু করে দিয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে অনুশীলন হবে দুই জনে এবং অবশ্যই শারীরিক দূরত্ব মেনে। তৃতীয় ধাপে কিছুটা বড় গ্রুপে (১০ জনের কম) খেলোয়াড়রা ও একজন কোচ থাকতে পারবেন। আর চতুর্থ ধাপে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পুরো দল এক সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে।
লম্বা সময় বাইরে থেকে মাঠে ফেরায় বোলারদের চোটে পড়ার ঝুঁকি থাকবে বেশি। তাই সংস্করণ অনুযায়ী বোলারদের জন্য আলাদা অনুশীলন রুটিন দেয়া হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার জন্য প্রস্তুত হতে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ অনুশীলন করতে হবে, যেখানে নিজের পুরোটা দিয়ে অন্তত ৪-৫ সপ্তাহ বোলিং করতে হবে। ওয়ানডের ক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহ, টি-টোয়েন্টির জন্য ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ অনুশীলনের প্রয়োজন পড়বে। এই দুই ক্ষেত্রেই ম্যাচের মতো করে ৩ সপ্তাহ নেটে বোলিং করতে হবে।
আইসিসি বলছে, ক্রিকেটারদের অনুশীলন কিংবা ক্রিকেটীয় কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ড ও সে দেশের সরকারের নির্দেশনার ওপর। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে সদস্য দেশগুলো কীভাবে পুনরায় ক্রিকেট শুরু করতে পারে, সে পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই গাইডলাইনের মাধ্যমে।
এর আগে আইসিসির ক্রিকেট কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে এখন থেকে বলে থুতু বা লালা দিয়ে বল শাইন করা যাবে না।