বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় করা ফুটবলার ও কোচদের গল্প

খলিলুর রহমান

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২০, ০১:৪৩ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১, ০১:৪৮ পিএম

বাতাসে টাকা ওড়ে। কথাটা রূপক অর্থে বলা হয়ে থাকে। তবে বিশ্ব ফুটবলে সত্যি সত্যিই টাকা ওড়ে! বিশ্বসেরা ফুটবলার এবং ফুটবল কোচদের আয়-রোজগারের হিসাব শুনলে মাথাটা ঘুরে যায়। অবিশ্বাস্য মনে বারবার প্রশ্নের বুদবুদ ওঠে, মানুষ কীভাবে এত টাকা আয় করে? 

বিশ্বসেরা ব্যবসায়ীরা সারা দুনিয়ায় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধমে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। তবে বিশ্বসেরা ফুটবলার এবং কোচরাও কম যান না। অমিয় প্রতিভা ও অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের সুবাদে এক দিকে যেমন অর্জন করেছেন বিশ্ববাসীর ভালোবাসা, মর্যাদা, সম্মান, খ্যাতি, অন্যদিকে দু’হাতে কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা। কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর সুবাদে কাটাচ্ছেন বিলাসী চকচকে জীবন।

এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী ৪ ফুটবলার এবং ৪ কোচের গল্প জানবো। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ফুটবলার-কোচদের আয়ের ব্যারোমিটার যেহেতু ওঠা-নামা করে, তাই ফুটবল নিয়ে গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছরই নতুন করে তালিকা প্রকাশ করে। এবারও সর্বোচ্চ আয়কারী ফুটবলার-কোচদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিস্ময়কর হলো, বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী ফুটবলার এবং কোচ, দু’জনই আর্জেন্টিনার। সর্বোচ্চ আয়কারী ফুটবলার বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। কোচদের তালিকায় সবার ওপরে অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো সিমিওনে। তথ্যটা শুনে বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টাইন ভক্তরা নিশ্চয় খুব খুশি।

এবার প্রকাশিত সর্বোচ্চ আয়কারী ফুটবলারদের তালিকায় খুব বেশি চমক নেই। মেসি আগেও শীর্ষে ছিলেন। এবারও তিনি তার আসন ধরে রেখেছেন। তবে কোচদের তালিকার এক নম্বর নামটিই বড় চমক। গত বছর আয়ে শীর্ষে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলা। এবার তাকে দুইয়ে ঠেলে এক নম্বরে উঠেছেন দিয়েগো সিমিওনে। এবার নিশ্চয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে, এই সেরাদের মধ্যে কার কত আয়। এই কৌতুহল মেটাতে নিচে উল্লেখিত প্রত্যেকের গল্পে কষ্ট করে চোখ বুলাতে হবে।

সর্বোচ্চ আয়কারী ৪ ফুটবলার

লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা) ১২১২ কোটি টাকা


গত ৩ বছর ধরেই আয়ে সবার শীর্ষে মেসি। বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা এবারও নিজের মুকুটটা ধরে রেখেছেন। ফিফা বর্ষসেরা এবং ব্যালন ডি’অর জয়ের মাধ্যমে বেড়েছে তার আয়ও। ক্লাবের বেতন, ম্যাচ ফি, পুরস্কারের প্রাইজমানি, নানা রকম বোনাস, বিজ্ঞাপনী চুক্তি, ইমেজ স্বত্ব, ইনস্টাগ্রামে ছবি-স্ট্যাটাস পোস্টের মাধ্যমে আয়-সব মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় ১৩০ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ১২১২ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার ৮৬০ টাকা। 

বছরে এত এত টাকা আয় যার, তার জীবন যাত্রাটা কতটা জাঁকজমকপূর্ণ হবে, সহজেই অনুমেয়। মন চাইলেই রেকর্ড ৬ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী কিনতে পারছেন নতুন নতুন গাড়ি, ব্যক্তিগত বিমান! দানও করেন দু’হাতে।

ক্রিস্টয়িানো রোনালদো (জুভেন্টাস) ১০৫৪ কোটি টাকা


এক সময় সর্বোচ্চ আয়ের খেতাবটা রোনালদোর দখলেই ছিল। তবে গত বছর কয়েক ধরে মুকুটটা হাত ছাড়া হয়েছে তার। তবে গত বছরের তুলনায় এবার তার উন্নতি হয়েছে। ৩ নম্বরে থেকে উঠে এসেছেন দুই নম্বরে। বেড়েছে আয়ের পরিমাণও। গবেষণায় উঠে এসেছে, সব খাত মিলিয়ে রোনালদোর বর্তমান বার্ষিক আয় ১১৩ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় ১০৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ টাকা। 

বছরে ভ্রমণ বিলাসের পেছনেই শত কোটি টাকা ঢালেন তিনি। মানব সেবায় দান, বেড়াতে গিয়ে হোটেল কর্মীদের বকশিসও দেন মোটা অঙ্কের টাকা। বাজারে নতুন মডেলের গাড়ি এলে, সেটি তো রোনালদোর কেনা চাই-ই চাই। এই শখের কারণেই জুভেন্টাসের পর্তুগিজ তারকার বাসার গাড়ি গ্যারেজটা হয়ে উঠেছে ছোটখাটো একটা শো রুম।

নেইমার (পিএসজি) ৮৫৩ কোটি টাকা


মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগদানের মাধ্যমে ব্রাজিল তারকার আয়-রোজগার বেড়ে এক লাফে আকাশচুম্বি হয়ে যায়। গত দুই বছর আয়ে মেসির পরই ছিলেন নেইমার। কিন্তু এবার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পেছনে পড়ে গেছেন। তাই বলে তার আয়ের অঙ্ক হ্রাস পায় নি। বরং চক্রবৃদ্ধি হারে অঙ্কটা বড়ই হয়েছে। বর্তমানে ২৭ বছর বয়সী নেইমারের বার্ষিক আয় ৯১.৫ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা দাঁড়ায় ৮৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৬ টাকা। আয় যেমন করেন, তেমনি ব্রাজিল তারকা ব্যয়টাও করেন দুহাত খুলে। বিশেষ করে নতুন নতুন মেয়ে বন্ধু জুটিয়ে তাদের নিয়ে জমিয়ে পার্টি-আড্ডায় বিশাল অঙ্কের টাকা ঢালেন তিনি।

আতোইন গ্রিজমান (বার্সেলোনা) ৪১০ কোটি টাকা


২৮ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড এই মৌসুমেই অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বার্সেলোনায়। মূলত আকাশচুম্বি বেতনের টোপ ফেলেই তাকে অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদ থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে এনেছে বার্সেলোনা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তাকে আনা, গ্রিজমান ক্লাবের সেই প্রত্যাশা তেমন পূরণ করতে পারছেন না। তবে নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা ঠিকই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

গ্যারেথ বেল, পল পগবাদের পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ আয়কারীদের তালিকায় এক লাফে উঠে এসেছেন ৪ নম্বরে। যদিও শীর্ষ তিন থেকে তিনি আয়ে অনেক পিছিয়ে। গ্রিজমানের বর্তমান বার্ষিক আয় ৪৪ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪১০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ লাখ ১৯৮ টাকা। ক্লাব থেকে বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে গ্রিজমানের আয় নেইমার-রোনালদোদের কাছাকাছিই। তবে বিজ্ঞাপনী চুক্তিসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে আয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ ৩ জনের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।

সর্বোচ্চ আয়কারী ৪ কোচ

দিয়েগো সিমিওনে (অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদ) ৪০৬ কোটি টাকা


৪৯ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন কোচের উত্থানের গল্পটা রূপকথার গল্পের মতো। ২০০৬ সালে কোচিং যাত্রার শুরু। তবে সিমিওনে প্রথম আলোচনায় উঠে আসেন ২০১১ সালে নিজের সাবেক ক্লাব অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে। অন্য সেরা কোচদের মতো শিরোপা সাফল্য হয় তো তার নেই। তবে কোচিং দক্ষতা, ধরণে সিমিওনে ঠিকই বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন। সবচেয়ে বেশি মন জয় করেছেন অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের কর্তাদের। সিমিওনের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েই তার বেতন হুহু করে বাড়িয়েছে অ্যাথলেতিকো। বছর কয়েক আগেও সর্বোচ্চ আয়কারী কোচদের শীর্ষ দশেও ছিলেন না সিমিওনে। সেই সিমিওনে এখন এক নম্বরে!

পেছনে ফেলে দিয়েছেন পেপ গার্দিওলা ও হোসে মরিনহো, জিদানদের মতো অবিশ্বাস্য শিরোপা সাফল্যধারী কোচদের। গবেষণায় উঠে এসেছে, তার বর্তমান বার্ষিক আয় ৪৩.৬ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ লাখ ৮৫১ টাকা। একজন কোচ বছরে ৪০৬ কোটি আয় করেন, এটা বিশ্বাস করাও কঠিন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সিমিওনে খেলোয়াড়ি জীবনে এর এক-তৃতীয়াংশও আয় করতেন না!

পেপ গার্দিওলা (ম্যানচেস্টার সিটি) ৩০৭ কোটি টাকা


বেশির ভাগ ফুটবলবোদ্ধাই বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর কোচ মানেন পেপ গার্দিওলাকে। অবিশ্বাস্য শিরোপা সাফল্য, কোচিংয়ের ধরণ এবং দক্ষতাই এই উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে ম্যানচেস্টার সিটির এই স্প্যানিশ কোচকে। বিশ্বসেরা এবং ধনী ক্লাবগুলোর কাছে তার চাহিদাও বেশি। ব্যাপক এই চাহিদার কারণে ৪৯ বছর বয়সী গার্দিওলার বেতনও আকাশচুম্বি। গত কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ আয়কারী কোচের মুকুট ছিল তার মাথাতেই। এবার সেই মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন সিমিওনে, তবে তার বেতন কমেনি, বরং বেড়েছে। বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটিতে তার বার্ষিক আয় ৩৩ মিলিয়ন ইউরো বা ৩০৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৯ টাকা।

হোসে মরিনহো (টটেনহাম) ২৮৯ কোটি টাকা


টটেনহামের পর্তুগিজ কোচ নিশ্চিতভাবেই বর্তমান বিশ্বের সেরা কোচদের একজন। এক সময় তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ডিম্যান্ডেবল কোচ। আয়েও ছিলেন সবার সেরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গার্দিওলা ও সিমিওনে তরতর করে এগিয়ে যাওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই কোচ পেছনে পড়ে গেছেন। তবে তৃতীয় হলেও ৫৬ বছর বয়সী মরিনহোর বার্ষিক আয়ের অঙ্কটা চোখ কপালে তোলার জন্য যথেষ্ট। মৌসুমের শুরুতে টটেনহামের ইংলিশ ক্লাবটিতে দায়িত্ব নেয়া মরিনহোর বর্তমান বার্ষিক আয় ৩১ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮৯ কোটি ২০ লাখ ১৬ হাজার ৯১২ টাকা।

ইয়ুর্গেন ক্লপ (লিভারপুল) ১৬৩ কোটি টাকা


শিরোপা সাফল্য কোচদের আয়-রোজগারে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, ইয়ুর্গেন ক্লপ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। গত বছরও লিভারপুলের জার্মান কোচ সর্বোচ্চ আয়কারী কোচদের তালিকার শীর্ষ দশে ছিলেন না। সেই ক্লপ এবার এক লাফে উঠে এসেছেন ৪ নম্বরে! গত মৌসুমে দীর্ঘদিন পর লিভারপুলকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা এনে দিয়েছেন ৫২ বছর বয়সী ক্লপ। পাশাপাশি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও দলকে করেন রানার্সআপ।

মাঠের অবিশ্বাস্য সেই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে ক্লাব লিভারপুল এক ঝাটকায় তার বেতন প্রায় দ্বিগুণ করেছে। তার বর্তমান বার্ষিক আয় ১৭.৫২ মিলিয়ন ইউরো বা ১৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯ টাকা। ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ক্লপ নিজের আয়ে নিজেই বিস্মিত। তবে আয় হঠাৎ আকাশচুম্বি হলেও সাধারণ জীবন যাপনই পছন্দ ক্লপের। এতটুকু অহংকার নেই তার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh