ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ১১:৫৬ এএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২০, ০৫:৫২ পিএম
যখন চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হলেন সেদিনই (বুধবার) নেপালের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ দেশটির নতুন ম্যাপ সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে। নেপালের নতুন ম্যাপে ভারতের কিছুটা অংশও রয়েছে বলে দাবি করেছে দিল্লি।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। চীনের সঙ্গেও মতবিরোধ ছিল। কিন্তু নেপালের মতো ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রও এখন কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশের তিনজন মন্ত্রী ভারত সফর বাতিল করেছিলেন এমন একটা সময়ে, যখন বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সংখ্যালঘুদের নিজেদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য নতুন আইন করেছিল ভারত। যদিও ওই আইন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বারেবারেই বলেছে যে আইনটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এই ঘটনাগুলো থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কেন গত কয়েক বছর ধরে নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে?
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বলছিলেন, এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই বোঝে যে চীন-ভারত সম্পর্কের ওপরেই নির্ভর করছে তারা নিজেরা কতটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে। নেপাল সুযোগটা আগে থেকেই নিয়েছে। এখন আরো বেশি করে সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক ভারতের চেয়ে অনেক উন্নত।
ভারতে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক চীন বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। চীনের পতাকা পোড়ানো হচ্ছে এবং চীনা পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
নেপালের সঙ্গে বিবাদ
যখন এরকম একটা চীন বিরোধী মনোভাব ভারতের সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সেই সময়েই আরেক প্রতিবেশী নেপাল তাদের দেশের নতুন মানচিত্র পার্লামেন্টে পাশ করিয়ে নিয়েছে। নতুন ম্যাপে ভারতের কিছুটা অংশও রয়েছে বলে দিল্লির অভিযোগ।
নেপালের মতে, নতুন মানচিত্রর ভিত্তি হচ্ছে ১৮১৬ সালের সুগাউলি চুক্তি। কিন্তু ভারত সেই দাবি নাকচ করে দিয়ে আসছে। মে মাসের মাঝামাঝিতে বিতর্কিত ভূখণ্ড কালাপানি আর লিপুলেখকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় নেপালের সরকার।
অথচ ভারতের সব থেকে বন্ধু রাষ্ট্র বলে মনে করা হয় যাদের, তাদের মধ্যে নেপাল অন্যতম। কিন্তু তারাও ভারতের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কাকলি সেনগুপ্ত জানান, ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তবে চীন অনেক বেশি আগ্রাসী। যদি নেপালের নতুন মানচিত্র প্রকাশের ঘটনাটা দেখি, সেখানেও চীনের প্রভাব কাজ করে থাকতে পারে।
নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতির জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দোষ দিচ্ছেন দেশটির বিশ্লেষকরা।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি ঘোষ জানান, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিদেশ নীতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর খুব একটা বক্তব্য বা দূরদৃষ্টি লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ২০১৪ সালের আগে অনেকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, কিন্তু সে সবই ছিল তার সংগঠনের প্রচারের জন্য, হিন্দুত্ববাদের প্রচারের জন্য। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেও মোদী বিদেশ নীতি সংক্রান্ত যা করেছেন, তারও বেশিরভাগই প্রচারসর্বস্ব।
তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সব সার্ক দেশগুলোর প্রধানদের আহ্বান জানালেন, নওয়াজ শরিফও এলেন। কিন্তু কাজের কথা কিছু এগুলো না। তারপর থেকে তিনি যতবারই বিদেশ সফরে গেছেন, সেগুলো যত না সেই সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার জন্য, তার থেকে বেশি নিজের দেশের মানুষের কাছে প্রচারের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলেই আমার মনে হয়, যোগ করেন ঘোষ।
মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চীন সফর করেছেন পাঁচবার এবং ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর চীনা নেতার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তার বৈঠক হয়েছে অন্তত ১৮বার।
কিন্তু নিকটতম প্রতিবেশিদের কাছে কি ভারতের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে- দেশের ভেতরে উগ্র জাতীয়বাদী মনোভাব উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ীর ভাষ্য, যেসব আইন বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাশ করা হচ্ছে, সেগুলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো ভালভাবে নিচ্ছে না। আজকে বিশ্বায়নের যুগে উগ্র জাতীয়তাবাদ কিন্তু কখনই কাম্য নয়। আর ভারতের কাছে প্রতিবেশীরা এটা আশাও করে না। ভারত একটা সময়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে ছিল, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে - সেরকম একটা দেশের কাছে প্রতিবেশীরা এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী আইন আশা করে না।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন প্রতিটা দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা চালাতে হবে ভারতকে।
সুত্র: বিবিসি বাংলা