সঞ্চয়পত্রে লাগাম টানায় বিপাকে মধ্যবিত্ত

শেখ নোমান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২০, ০২:০৪ পিএম | আপডেট: ২৮ জুন ২০২০, ০২:৪৫ পিএম

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের তুলনায় সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ কমে যাচ্ছে। ফলে বেকায়দায় পড়বেন মধ্যবিত্ত মানুষ। বিশেষ করে যারা বয়স্ক, পেনশনভুক্ত, যাদের অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।

এছাড়া বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে করা, এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলকসহ বিভিন্ন বিধান করা হয়েছে। সাধারণত দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থা চালু আছে। পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র মূলত পাঁচ বছর মেয়াদি। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ তিন মাস অন্তরও তোলা যায়। সাধারণত ৫০ হাজার, এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। সারা দেশের জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, সব ডাকঘর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব কার্যালয়সহ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে  সঞ্চয়পত্রগুলো পাওয়া যায়।

তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র মিলে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকা সীমা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা যেখান থেকেই কিনুক সব তথ্য নির্দিষ্ট ডাটাবেজে জমা হওয়ায় এখন আর কেউ সীমার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না।

কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

আর পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেবল অবসরভোগী সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনে এর লভ্যাংশের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

তবে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উম্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোনো পেশার মানুষ একক বা যৌথ নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের মুনাফার ওপর উৎসে কর কমিয়ে পাঁচ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সরকার। আবার এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে কিনতে হবে, জমা দিতে হবে আয়কর-টিন শনাক্তকারী নম্বরও। এ ছাড়া এখন লাগে গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে হিসাবে গ্রাহকের সুদ ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সম্মতি বা সনদ লাগবে।

গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা), ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা), ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা) ঋণ নেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু বছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh