বিষণ্ণতার রঙগুলো

ইয়ারা যোহারীন

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ০৩:৫৭ পিএম

কারণে-অকারণে আমরা হয়ে যাই বিষণ্ণ, অনেক সময় কোনো কারণ নেই তারপরও বলি মন খারাপ কিছু ভালো লাগছে না, সবকিছুর প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বিষণ্ণ ব্যক্তি নিজেকে তার চারপাশের মানুষ থেকে আড়াল করতে ভালোবাসে, তার ভেতরে একটা ভীতি কাজ করে অন্যের কাছে অপমানিত হবার, সে নিজেকে ব্যর্থভাবে এবং অন্যদের সফল মনে করে, ফলে সে বন্ধু-বান্ধবের সমাগম পছন্দ করে না।

বিষণ্ণতা এমন এক রোগ, যা ব্যথার মতোই অন্য কাউকে দেখানো বা বোঝানো যায় না, যদি না ব্যক্তিটি শেয়ার করে, তবে কাছের মানুষটি বিষণ্ণতায় ভুগছে কি না, আপনি তা সহজে বুঝতে পারবেন। কেননা তার আচরণে পরিবর্তন আসবে, সে একা থাকতে পছন্দ করবে। কখনো নির্ঘুম কিংবা প্রচুর ঘুম হতে পারে, ক্ষুধামান্দও হতে পারে, আবার ক্ষুধা বেড়েও যেতে পারে। কারণ ছাড়া রেগে যাওয়া, মন খারাপ করে বসে থাকা সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সর্বোপরি অস্বাভাবিক আচরণই হচ্ছে মানসিক অবসাদের লক্ষণ।


গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৫০ ভাগ আত্মহত্যার কারণ এই বিষণ্ণতা, কেননা বিষণ্ণতার চূড়ান্ত পর্যায় হলো আত্মহত্যা। এ ধাপে পৌঁছতে রোগীর সময় লাগে, রোগী নিজেকে অযোগ্য, ত্রুটিপূর্ণ, পরিবার ও সমাজের বোঝা ভাবতে শুরু করে। আত্মহত্যার লক্ষণস্বরূপ সে মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলে, আশাহত থাকে, দ্রুত মুড সুইং করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশামূলক পোস্ট দেয়, এসব বিষয় আপনার চোখে ধরা পড়লে আপনিও পারেন একজনকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে।

আত্মহত্যাকে যেহেতু বিষণ্ণতার পরিণতি বলছি, সেহেতু বিষণ্ণতা কেন হয়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। সব বয়সের মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা থাকে, একটা ছোট্ট শিশুর খেলনা পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অন্যের খেলনার মতো নিজের খেলনা না হবার ক্ষোভ, পরীক্ষার মন্দ ফলাফল, বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ, মোবাইল বা পাখি ড্রেস পাবার বায়না, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব, ব্যবসা বা ক্যারিয়ারে ধাক্কা মানুষকে বিষণ্ণতার অতল সাগরে ডুবিয়ে দেয় কেউ কেউ এ থেকে রক্ষা পেতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়।

এ দেশে মেয়েরা শিশুকাল থেকে নানাভাবে অভিযুক্ত হয়ে আসে, ইভ টিজিং কিংবা সাইবার ক্রাইম জাতীয় অপরাধের বলি হয় অনেক অবুঝ মেয়ে, এ ছাড়াও শারীরিক গঠন, গায়ের রঙ, মেধা নিয়ে তাকে শুনতে হয় টিপ্পনী। নিজের সম্মান রক্ষায় বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ, আত্মহত্যা করলে যে আর ফিরে আসা যাবে না, তারা হয়তো ভুলেই যায়। বাবা-মায়ের পারিবারিক কলহ কিংবা জীবন সম্পর্কে তাদের নেগেটিভ ধারণা সন্তানকে দুর্বলচিত্তের করে দেয়। তার মন সবসময় খারাপ থাকে এবং অপরাধ করতে উদগ্রীব হয়।


এখানেও সেই একই বিষয় সে একটু যত্ন, একটু ভালোবাসা চায়, যেটা তার জীবনে অভাব। আত্মহত্যায় প্রবন মানসিক রোগীকে খুব সাবধানে ডিল করতে হয়। তার সঙ্গে নরম সুরে ধৈর্য সহকারে কথা বলতে হয়, মনোযোগ দিয়ে তার পুরো ঘটনাটা শুনতে হয়, তার ওপর না রেগে এবং হেয় না করে তাকে বুঝাতে হয় যে, তুমি একদম ঠিক আছ; কিন্তু তুমি, যদি বিষয়টা আরেকটু অন্যরকম ভাবো তো কাজটা হবে, তার কাজের প্রশংসা করতে হবে বাহবা দিয়ে উৎসাহ জোগাতে হবে, যারা সম্পূর্ণ একা থাকে তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে আলাপ থাকা এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখা আবশ্যক। ধর্মে বলা হয় আত্মহত্যা মহাপাপ। যারা সুন্দর জীবনটাকে যাপন করতে ভয় পায়, তারা পালিয়ে যেতে চায় জীবন থেকে।

বিষণ্ণতা দূর করতে করণীয়

যখনই কিছু ভালো লাগে না, তখনি লিখতে বসুন কি ভালো লাগে না, কি করতে ইচ্ছে করে। আত্মহত্যা করতে মন চাইলেও লিখুন কেন চান, তালিকা করুন আপনার ছোট ছোট প্রাপ্তির, যা আপনাকে আশা জুগিয়েছে, আপনি পূর্বে পেরেছেন এখনো পারবেন কেবল ইচ্ছা শক্তি প্রয়োজন। কিছু জিনিস জীবন থেকে বাদ দিতে হবে অতিআগ্রহ, পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা ও হিংসা। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে ভালোলাগার বিষয় দিয়ে। পছন্দের বিনোদন, ভ্রমণ চাঙ্গা করবে এমন কোনো কাজ জোর করে নয় মন থেকে ভালোবেসে করুন, উপভোগ করুন প্রিয় জীবনকে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh