বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি ঘটনায় নিহতদের পরিচয় মিলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ০৩:০৪ এএম

বুড়িঙ্গায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মুন্সীগঞ্জে শোকের মাতম বইছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে আটজন নারী ও তিন শিশু রয়েছে। 

নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো অনেক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। সহযোগিতায় র‌্যাব ও বিমানবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার রয়েছে।

সোমবার রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে সকাল ৯টার দিকে প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিল এমভি মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটের কাছাকাছি শ্যামবাজার বরাবর ফরাশগঞ্জ পৌঁছালে একই সময় চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসছিল ময়ূরী-২ নামের আরেকটি লঞ্চ। এসময় মুহূর্তের মধ্যেই ময়ূরী-২ লঞ্চটি মর্নিং বার্ড লঞ্চটির ওপর উঠে যায়। এতে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি দুমড়ে-মুচড়ে প্রায় ৫০ ফুট পানির নিচে চলে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। উদ্ধার কাজে ডুবুরি দল নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে ওপরে উঠে গেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিতরা।

উদ্ধার হওয়া নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। 

বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমান্ডোর গোলাম সাদেককে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করবে বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এটা কোন দুর্ঘটনা হতে পারে না, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে সদরঘাটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।’

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘উৎসুক জনতা উদ্ধার কাজে বাধাগ্রস্ত করছে।’ নিহতের প্রতিটি পরিবারকে দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।

দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের নাম পরিচয় হলো- 

১. শাহাদত হোসেন (৪৮), পিতা আব্দুররহিম, গ্রাম গোয়ালঘুন্নি, মিরকাদিম মুন্সীগঞ্জ সদর।

২. আবু তাহের বেপারী (৫৮), পিতা আলীহোসেন, গ্রাম গোয়ালঘুন্নি, মিরকাদিম মুন্সীগঞ্জ সদর।

৩. স্মুন তালুকদার (৩৫), পিতা আবুলকালাম, গ্রাম গোয়ালঘুন্নি, মিরকাদিম মুন্সীগঞ্জ সদর।

৪. সরনা বেগম (৩৫), স্বামী মাসুদশেখ, টঙ্গিবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ।

৫. মুক্তা আক্তার(১৩), পিতা মাসুদ শেখ, টঙ্গিবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ।

৬. আফজাল শেখ (৪৮), পিতা ইব্রাহিম শেখ, বাঘিয়া, টঙ্গিবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ।

৭. মো. মনিরুজ্জামান (৪২), পিতা আব্দুলহালিম, গ্রাম ছলিমাবাদ, আব্দুল্লাহপুর টঙ্গিবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ।

৮. গোলাম হোসেন (৫০), পিতা আব্দুল হাকিম ভূঁইয়া, গ্রাম মশরীবাজার, রামপাল, মুন্সীগঞ্জ সদর।

৯. সুবর্ণা আক্তার (৩৫), স্বামী জাকির হোসেন, সুজানগর, রামপাল, মুন্সীগঞ্জ সদর। 

১০. তামিম (১০), পিতা জাকির হোসেন, সুজানগর, রামপাল, মুন্সীগঞ্জ সদর।

১১. সাইদূর হোসেন (৩৯), পিতা মজিদ সারেং, মোল্লাকান্দি, মুন্সীগঞ্জ সদর।

১২. সুফিয়া বেগম (৫০), স্বামী পরশমিয়া, পশিমপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ সদর।

১৩. মো. শহিদুল ইসলাম (৬৯), পিতা মৃত ইব্রাহিম শেখ, বাঘিয়া, যশলং টংগিবাড়ি। 

১৪. মো. মিজানুর রহমান কনক (৩২), পিতা মো. দেলোয়ার হোসেন, ধলাগাও, রামপাল, মুন্সীগঞ্জ সদর। 

১৫. সত্তরঞ্জন বনিক (৬৫), রামগোপালপুর, পিতা মৃত দেবেন্দ্র বনিক, মুন্সীগঞ্জ সদর।

১৬. মো. পাপ্পু (৩২), পিতা মো. সোহরাব, নহর দিঘিরপাড়, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ সদর।

১৭. বাসু দেবনাথ (৪৫), পিতা মৃত বাদল দেবনাথ, পাইকপাড়া, সিরাজদিখান।

১৮. আয়শা বেগম (৬৫), স্বামী পাচকরি বেপারী, কামারখাড়া, টঙ্গিবাড়ি।

১৯. মো. সাইফুর রহমান উজ্জ্বল (৪০), পিতা হাজী আব্দুররফ মাতবর, মালপারা, মুন্সীগঞ্জ সদর। 

২০. বিউটি বেগম (৩৮), পিতা মৃত আলাউদ্দিন শেখ, ধলাগাও, রামপা, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২১. ময়না বেগম (৩৫), পিতা আব্দুর রাজ্জাক, টঙ্গিবাড়ি।

২২. শামীম বেপারী (৪৭), পিতা মৃত আব্দুল জলিল, মিরেরপাড়া, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২৩. মো. দিদার হোসেন (৪৫), পিতা আব্দুল মজিদ, নৈদিঘিরপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২৪. মো. মিল্লাত (৩৫), পিতা আব্দুল সামাদ, পানহাটা, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২৫. সিফাত (০৮), পিতা আব্দুর রহমান, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গিবাড়ি।

২৬. আলম বেপারী (৩৮), পিতা জয়নাল বেপারী, তারাহাটি, শ্রীনগর।

২৭. ইসলাম শরীফ (৩৫), পিতা জাহান শরীফ, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২৮. মো. সাইম (১৭), পিতা আফসারুদ্দিন, তিলারদি, মুন্সীগঞ্জ সদর।

২৯. হাফেজা খাতুন (৩৮), পিতা আব্দুল মজিদ, নৈদিঘিরপাড়, রিকাবিবাজার, মুন্সীগঞ্জ সদর।

৩০. তালহা (২), পিতা বেলায়েত হোসেন, আশরকাটি, টঙ্গিবাড়ি।

৩১. আমির হোসেন (৫৫), পিতা মৃত রুস্তম শরীফ, বানাঘাটা, দোহার, ঢাকা।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, কতজন যাত্রী মারা গেছেন, কতজন জীবিত ফিরেছেন এমন সঠিক তথ্য এখনো পাননি। তবে জেলার যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে সরকারিভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় সেটা করা হবে। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়া হলে এবং ফিটনেস ঠিক না থাকলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh