এসএসসি পুনর্নিরীক্ষণে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ০৯:০৩ এএম

এসএসসি ও সমমানের প্রকাশিত ফল চ্যালেঞ্জ করে রেকর্ড সংখ্যক ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৯৩ জন। এ ছাড়াও ফেল থেকে জিপিএ ৫ সহ বিভিন্ন স্তরে জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে। কেউ আবার আবেদন করে পাস থেকে ফেলেও পড়েছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফল পরিবর্তনের মধ্যে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে খাতায় বেশি পরিবর্তন হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৩০ জুন) পুনর্নিরীক্ষণ ফল প্রকাশের পর ১১ শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট না হয়ে সারা দেশে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৪৭১ শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করে। এ কারণে বিভিন্ন বিষয়ের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য চার লাখ ৮১ হাজার ২২২টি আপত্তি তোলা হয়। তার মধ্যে ঢাকা বোর্ডে এক লাখ ৪৬ হাজার ২৬০, বরিশালে ২৩ হাজার ৮৫০, চট্টগ্রামে ৫২ হাজার ২৪৬, দিনাজপুরে ৪০ হাজার ৭৫, রাজশাহীতে ৪৪ হাজার ৬১, সিলেটে ২৩ হাজার ৭৯০, কুমিল্লা বোর্ডে ৩৯ হাজার ৩০৩, ময়মনসিংহে ৩১ হাজার ৩৩১, মাদরাসা বোর্ডে ২৮ হাজার ৪৮৪ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১৭ হাজার ৫৩৮টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন পড়ে।

এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে আবেদনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে ৫৯ হাজার ৭৯০ আবেদনকারী বিভিন্ন বিষয়ের ফলে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করে। আবেদনের পর পুনর্নিরীক্ষণে সবগুলো বোর্ডে ছয় হাজার ২৬৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে ৭৯৩ পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, পুনর্নিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ১০৫ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯৯ পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডে দুই হাজার ২৪৩ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৩৬৭ জনের, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫০ জন। ফেল থেকে পাস ৩৫ জন। ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে একজন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ১৬৫ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ২৩ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩০ পরীক্ষার্থী।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৪৭ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৩ জন। উত্তীর্ণ দুই পরীক্ষার্থী আবেদন করে পুনর্পরীক্ষণে ফেল করেছে। ৩৬৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৩৪ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪০ জন। ফেল করা তিন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। বোর্ডের ২৫২ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্র্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৪১ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৩ জন। ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে একজন। ৬০৯ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ২৫ শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ জন। ১৩৯ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।

যশোর শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন ১২৩ জন, ফেল থেকে পাস ৪৪ জন এবং নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৫ জন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪৪১ জনের। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬১ জন, ফেল থেকে পাস করেছে ৬২ জন।

অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এক হাজার ১৭১ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১২৪ জন ফেল থেকে পাস করেছে। এ ছাড়া নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ পরীক্ষার্থী। মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ৮৭ জনের, ফল পরিবর্তন ২৪৩ জনের, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৩ জন, ফেল থেকে পাস করেছে ১০৫ জন। আবেদনের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৫২২টি আর আবেদনকারীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪৩ জন, ফেল করা দুই শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণেও ফেল করেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানান, খাতা পুনর্মূল্যায়নে সবকটি উত্তরে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে (কম্পিউটারে ফল প্রণয়নে পাঠযোগ্য ফরম) উত্তোলনে ভুল হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না এসব বিষয় পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ফল তুলনামূলক বেশি পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী শিক্ষকরা কি কারণে এ ধরনের ভুল করেছেন তার কারণ জানতে চাওয়া হবে। যেসব শিক্ষকের ভুল ধরা পড়ছে তাদের আগামী দুই বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন থেকে বিরত রাখা হবে। কেউ ইচ্ছা করে দায়িত্বে অবহেলা করেছে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত ৩১ মে প্রকাশিত হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিলো ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮, গত বছর পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন। পরীক্ষার ফলে আপত্তি থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য গত ১ জুন পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়ে ৭ জুন শেষ হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh